সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ২০২৫ এবং ২০২৬ সালের জন্য জমির সর্বনিম্ন বাজারমূল্য বা মৌজা দর নির্ধারণ করেছে সরকার। গত ১ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ৩১ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত রেজিস্ট্রিকৃত সাফ কবলা দলিলের গড় মূল্যের ভিত্তিতে এই নতুন তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে।
উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মোঃ মোশারফ হোসেন স্বাক্ষরিত এই তালিকায় মৌজা ও শ্রেণীভেদে প্রতি শতক জমির সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতি দুই বছর অন্তর জমির এই বাজারমূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়, যার উদ্দেশ্য হলো জমির প্রকৃত মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারি রাজস্ব নিশ্চিত করা।
তালিকা বিশ্লেষণের গুরুত্বপূর্ণ দিক:
নির্ধারণ পদ্ধতি: ২০২৩ সালের শুরু থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত হওয়া দলিলগুলোর গড় মূল্যের ওপর ভিত্তি করে এই তালিকা করা হয়েছে।
শ্রেণীবিভাগ: মৌজাগুলোতে জমির প্রকৃতি অনুযায়ী—ভিটা, বাড়ি, চারা, বোরো, লায়েক পতিত, পুকুর ইত্যাদি শ্রেণীতে আলাদা আলাদা মূল্য ধরা হয়েছে।
প্রভাব: নতুন এই তালিকা অনুযায়ী, এখন থেকে এই এলাকায় ভূমি রেজিস্ট্রেশন করতে হলে নির্ধারিত সর্বনিম্ন মূল্যের কম দামে দলিল করা যাবে না। এতে করে সরকারি কোষাগারে রেজিস্ট্রেশন ফি, স্ট্যাম্প শুল্ক এবং কর বাবদ রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রেজিস্ট্রেশন সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি: সারাদেশে বর্তমানে ভূমি রেজিস্ট্রেশন খরচ কমানোর পরিকল্পনা থাকলেও, নির্ধারিত মৌজা দরের ওপর ভিত্তি করেই রেজিস্ট্রেশন ফি (১%), স্ট্যাম্প শুল্ক (১.৫%) এবং স্থানীয় সরকার কর (৩%) হিসাব করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন এই তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী নাগরিকরা কোম্পানীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের নোটিশ বোর্ড বা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। তালিকার বাইরে কম মূল্যে জমি রেজিস্ট্রি করার কোনো সুযোগ থাকবে না।

বাংলাদেশের মধ্যে সিলেটে জমির দাম কি বেশি?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সামগ্রিকভাবে সিলেটে জমির দামকে “সবচেয়ে বেশি” বলা না গেলেও, ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরেই সিলেটের অবস্থান বেশ ওপরের দিকে। বিশেষ করে প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হওয়ার কারণে এখানকার জমির বাজারে একটি ভিন্ন ধরনের চাহিদা ও উচ্চমূল্য লক্ষ করা যায়।
নিচে সিলেটের জমির দামের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হলো:
১. ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাথে তুলনা:
ঢাকা: বাংলাদেশের সবচেয়ে দামি জমি ঢাকা শহরে, বিশেষ করে গুলশান, বনানী, মতিঝিল বা ধানমন্ডিতে। এখানে প্রতি কাঠা জমির দাম কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
চট্টগ্রাম: বাণিজ্যিক রাজধানী হওয়ায় চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, নাসিরাবাদ বা খুলশী এলাকায় জমির দামও অনেক উচ্চ।
সিলেট: ঢাকা বা চট্টগ্রামের মূল বাণিজ্যিক এলাকার তুলনায় দাম কিছুটা কম হলেও, বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সিলেটের জিন্দাবাজার, আম্বরখানা বা শাহজালাল উপশহর এলাকায় জমির দাম অন্যান্য অনেক বিভাগীয় শহরের চেয়ে বেশি।
২. সিলেটে উচ্চমূল্যের প্রধান কারণ (প্রবাসী রেমিট্যান্স): সিলেটের জমির দাম বেশি হওয়ার প্রধান কারণ হলো প্রবাসীদের বিনিয়োগ। লন্ডন, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী সিলেটিরা তাদের আয়ের একটি বড় অংশ নিজ এলাকায় জমি বা বাড়ি কেনায় ব্যয় করেন। ফলে চাহিদার তুলনায় জমির সরবরাহ কম থাকায় দাম দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
৩. সরকারি ও বাজারমূল্যের ব্যবধান: সরকারি “মৌজা দর” বা সর্বনিম্ন বাজারমূল্য অনুযায়ী সিলেটের দাম অন্যান্য জেলা থেকে খুব বেশি আলাদা মনে না হলেও, প্রকৃত বিক্রয়মূল্য অনেক সময় সরকারি দরের চেয়ে বহুগুণ বেশি হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার আপলোড করা ফাইল অনুযায়ী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ২০২৫-২৬ সালের জন্য কোনো কোনো জমির মৌজা দর প্রতি শতক ১০০০ থেকে ৫০০০ টাকার আশেপাশে (শ্রেণীভেদে), কিন্তু শহরের নিকটবর্তী বা উন্নত এলাকায় এই দাম শতক প্রতি কয়েক লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
৪. জমির ধরণ অনুযায়ী পার্থক্য:
আবাসিক জমি: সিলেট শহর ও শহরতলীর আবাসিক প্লটের দাম অনেক বেশি।
কৃষিজমি: গ্রামীণ এলাকার কৃষিজমির দাম বাংলাদেশের গড় দামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও প্রবাসীদের আগ্রহ আছে এমন গ্রামে দাম বেশি।
সারসংক্ষেপ: পুরো বাংলাদেশের মধ্যে সিলেটে জমির দাম সর্বোচ্চ নয় (ঢাকা শীর্ষে), তবে আঞ্চলিক চাহিদার ভিত্তিতে সিলেট অন্যতম ব্যয়বহুল এলাকা। বিশেষ করে প্রবাসীদের বিনিয়োগের কারণে সিলেটের আবাসন খাত অত্যন্ত শক্তিশালী এবং এখানে জমির দাম স্থিতিশীলভাবে বৃদ্ধি পায়।
