খতিয়ান কি? খতিয়ানে (Record of Rights) খতিয়ান নম্বর, জেলা ও মৌজার নাম লিপিবদ্ধ থাকে। এছাড়া একাধিক কলামে জমির মালিকের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, দাগ নং (Plot Number), জমির শ্রেণী, পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। খতিয়ানে কোন এক মৌজায় কোন একজন মালিকের জমির বিবরণ থাকে। আবার একটি খতিয়ানে একাধিক মালিকের জমির বিবরণও থাকতে পারে। এ খতিয়ানগুলো সাধারণত মৌজা ওয়ারী তৈরী করা হয়। অর্থাৎ কোন একটি মৌজার সকল খতিয়ান একসাথে বাধাই করা হয়। এজন্য রেকর্ড বইকে অনেকে সাধারণ বা প্রচলিতভাবে Volume – ও বলে থাকেন।

মৌজা (Mouza)- সার্ভের সময় সাধারণত একই রকম ভূ-প্রকৃতির ভৌগলিক এলাকা স্বতন্ত্রভাবে মাপজোক করা হয়। কোন থানা বা উপজেলার এরকম স্বতন্ত্র ভৌগলিক এলাকা বা ভূ-খন্ডই হলো মৌজা। মৌজা জরিপ বা ভূমি ব্যবস্হাপনার একটি একক। কয়েকটি গ্রাম একটি মৌজার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে । আবার কোন গ্রামেও একাধিক মৌজা থাকতে পারে। মৌজার কোন সুনির্দিষ্ট আয়তন নেই। তবে সাধারণতঃ কোন একটি উপজেলা একাধিক মৌজায় বিভক্ত থাকে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় ‘মৌজা’ বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি term। খতিয়ান বাদ দিলে মৌজার নাম উল্লেখ থাকে। উপজেলাধীন প্রত্যেক মৌজাকে একটি ক্রমিক নম্বর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এই নম্বরকে জে•এল নম্বর বলে। এটি স্থায়ী।

পর্চা কি? – যখন পৃথক একটি কাগজে খতিয়ানের অনুলিপি তৈরী করা হয় তখন তাকে পরচা বলা হয়। এই অনুলিপি সাধারণত হাতে লিখে বা কম্পোজ করে তৈরী হয়ে থাকে। অনুলিপি যখন রেকর্ড রুমের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষরিত হয় তখন তাকে নকল বা Certified Copy বলে। সহজ কথায় পরচা হল হাতে লিখিত বা Compose কৃত খতিয়ানের কপি বা খসড়ার রূপ।আমরা সিএস, এসএ এবং আরএস পরচা’র নাম শুনে থাকি। এগুলো কী? পরচা কী, সে সম্বন্ধে আমরা একটি ধারণা ইতোমধ্যেই পেয়েছি। সিএস, এসএ এবং আরএস পরচা হল আসলে বিভিন্ন রেকর্ডের খসড়া বা অনুলিপি বা কপি। কাজেই পরচা সিএস, এসএ, আরএস বা মহানগরে জরিপ এই ৪ প্রকার হতে পারে। এছাড়া জরিপ চলা কালে প্রাথমিকভাবে হাতে লেখা একটি খসড়া বিবরণ যাচাইয়ের জন্য জমির মালিককে দেওয়া হয়। একে মাঠ পরচা বা হাত পরচা বলে।

ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় দলিলাদি লিখন, সরকারি হিসাব ও অফিসের কাজ ইত্যাদি । “সরকারি মান” (Standard Measurement) বলে পরিচিত

“সরকারি মান” (Standard Measurement) বলে পরিচিতপর্চা বা রেকর্ডের সহি মুহুরী নকল (Certified Copy) পাওয়া যায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (DC office)- এর রেকর্ডরুমে। নির্ধারিত ফী সহ আবেদন করলে রেকর্ড রুম থেকে পরচা সরবরাহ করা হয়। পর্চা কখনো কোন দালালের কাছ থেকে নেওয়া যৌক্তিক নয়। এতে ভুল থাকতে পারে। কেবলমাত্র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষরসহ পর্চা-ই আসল বা Authentic পর্চা কেন প্রয়োজন? জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিবরণ, জমির খতিয়ান-দাগ, অংশ, হিসসা, শ্রেণী ইত্যাদি জানার জন্য পরচা প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে জমি কেনাবেচার সময় পরচা যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়। পরচা যাচাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস, এসি (ল্যান্ড) অফিস বা রের্কডরুমে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

সার্টিফিকেট কেস- ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়ার দায়ে আপনার বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট কেস হতে পারে। এতে আপনার বাপ দাদার ভোগ দখলকৃত জমি নিলাম হয়ে যেতে পারে। সুতরাং এ দুর্ঘটনা এড়াতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করুন। প্রয়োজনে সার্টিফিকেট অফিসার/সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর সাথে যোগাযোগ করুন।

১ একর জমি কত শতক? এক শতক = ৪৩৫.৬০ বর্গফুট

  1. ১ একর = ১০০ শতক
  2. ১ একর = ৪৩,৫৬০ বর্গফুট
  3. ১ একর = ১,০০,০০০ বর্গ লিঙ্ক
  4. ১ একর = ৪,৮৪০ বর্গগজ
  5. ১ একর = ৬০.৫ কাঠা
  6. ১ একর = ৩ বিঘা ৮ ছটাক
  7. ১ একর = ১০ বর্গ চেইন = ১,০০,০০০ বর্গ লিঙ্ক
  8. ১ একর = ৪,০৪৭ বর্গমিটার
  9. ১ শতক = ১ গন্ডা বা ৪৩৫.৬০ বর্গফুট

মৌজাম্যাপ বলতে কি বুঝায়?

খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপ দুটো মিলেই পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড। আসলে জরিপের সময় খতিয়ান বা জমির মালিকানার বিবরণ এবং জমির নকশা বা ম্যাপ এক সাথেই তৈরী করা হয়। কেবলমাত্র জমির খতিয়ান দেখে জমি চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। এজন্য মৌজা ম্যাপ বা জমির নকশার প্রয়োজন হয়। মৌজা ম্যাপ জমি চিহ্নিত করতে বা খুঁজে পেতে খুব সহায়ক। এতে দাগ নম্বর দিয়ে জমি সূচিত করা থাকে। ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমির পাশাপাশি রাস্তা, স্কুল, মসজিদ, পুকুর ঈদগাহ ইত্যাদি পাবলিক প্রপার্টিও চিহ্নিত থাকে। মৌজা ম্যাপ পর্চার মতই ডিসি অফিসের রেকর্ডরুম থেকে সংগ্রহ করা যায়।