আজকের খবর ২০২৫

দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত সম্পূর্ণ আলাদা ২০২৫ । আদালতগুলোতে বিচারকরা কেবল ফৌজদারি মামলার বিচার করবেন?

সূচীপত্র

আইন মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতগুলোকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দিয়েছে। যুগান্তকারী এই সিদ্ধান্তের ফলে জেলা পর্যায়ে বিদ্যমান মামলাজট কমানো এবং বিচারিক কার্যক্রমে গতি আনার আশা করা হচ্ছে – দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত সম্পূর্ণ আলাদা ২০২৫

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, এই পদক্ষেপের আগে একই বিচারককে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় ধরনের মামলার বিচার করতে হতো, যা মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার একটি প্রধান কারণ ছিল। এই দ্বৈত দায়িত্বের অবসান ঘটাতে এখন থেকে ২০৩টি অতিরিক্ত দায়রা আদালত এবং ৩৬৭টি যুগ্ম দায়রা আদালতে বিচারকরা কেবল ফৌজদারি মামলার বিচার করবেন। বর্তমানে দেশের অধস্তন আদালতগুলোতে প্রায় ১৬ লাখ দেওয়ানি এবং ২৩ লাখ ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আদালতগুলো আলাদা হওয়ার কারণে আশা করা যায় যে উভয় ধরনের মামলার নিষ্পত্তির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে, যা বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমাবে। বাংলাদেশ সরকার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, যেখানে ২০৩টি অতিরিক্ত দায়রা আদালত এবং ৩৬৭টি যুগ্ম দায়রা আদালত প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ রয়েছে। এই নতুন আদালতগুলো কেবলমাত্র ফৌজদারি মামলার বিচার করবে। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জেলা ও মহানগর এলাকায় দায়রা বিভাগের পুনর্গঠন করা হয়েছে এবং প্রতিটি এলাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যক অতিরিক্ত দায়রা আদালত ও যুগ্ম দায়রা আদালত স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কর্মরত আদালতগুলো অতিরিক্ত দায়রা জজ ও যুগ্ম দায়রা জজ হিসেবে বরাবরের মতো দায়িত্ব পালন করবেন যতক্ষণ না স্বতন্ত্র পদায়ন হয়।

২০৩টি অতিরিক্ত দায়রা আদালত এবং ৩৬৭টি যুগ্ম দায়রা আদালত প্রতিষ্ঠা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই আদালতগুলোতে বিচারকরা কেবল ফৌজদারি মামলার বিচার করবেন। এ নিয়ে একটি নিউজ লিখে দিন।

আদালতগুলোয় বিচারাধীন মামলাসমূহ প্রজ্ঞাপনের ৬০ দিনের মধ্যে নব প্রতিষ্ঠিত আদালতগুলোতে স্থানান্তরিত হবে এবং মামলা স্থানান্তরিত হবার পর সেই আদালতেই বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। এই প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে ও পূর্ববর্তী সংশ্লিষ্ট সকল প্রজ্ঞাপন বাতিল হবে।

২০৩টি অতিরিক্ত দায়রা আদালত এবং যুগ্ম দায়রা আদালত প্রতিষ্ঠা করে প্রজ্ঞাপন 2025

দেওয়ানি আদালতের কিছু প্রধান কাজ ২০২৫ । দেওয়ানি আদালতের প্রধান কাজ হলো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পত্তি, অধিকার এবং চুক্তি সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তি করা। ফৌজদারি আদালতের মতো এখানে অপরাধের বিচার হয় না, বরং এটি মানুষের ব্যক্তিগত অধিকার ও সম্পর্ক নিয়ে কাজ করে।

  1. সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি: জমিজমা, বাড়ি বা অন্য কোনো স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা, দখল বা উত্তরাধিকার নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ দেওয়ানি আদালতে সমাধান করা হয়।
  2. চুক্তি সম্পর্কিত মামলার বিচার: যখন কোনো চুক্তি ভঙ্গ করা হয় বা চুক্তির শর্তাবলি নিয়ে কোনো বিরোধ দেখা দেয়, তখন দেওয়ানি আদালত এর সমাধান করে।
  3. পারিবারিক বিরোধ: বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব এবং পারিবারিক অন্যান্য বিষয়ে আইনি সমাধান দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে হয়ে থাকে।
  4. ক্ষতিপূরণ ও নিষেধাজ্ঞা: কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অন্যায় কাজের ফলে যদি অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে দেওয়ানি আদালত ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে এবং ভবিষ্যতে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে।
  5. ঘোষণামূলক আদেশ: কোনো ব্যক্তি যদি তার কোনো আইনি অধিকার বা মর্যাদা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তবে তিনি দেওয়ানি আদালতে একটি ঘোষণামূলক আদেশের জন্য আবেদন করতে পারেন। সংক্ষেপে, দেওয়ানি আদালত হলো ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, যেখানে অপরাধ নয়, বরং মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং অধিকারের ওপর ভিত্তি করে সৃষ্ট বিরোধের মীমাংসা করা হয়।

এতে কি দ্রুত মামলা জট খুলবে?

হ্যাঁ। এটি বিচার বিভাগে ব্যাপক ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বিচার প্রক্রিয়ায় গতি আনার উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। ফৌজদারি বিচারের প্রসারে এই অতিরিক্ত ও যুগ্ম দায়রা আদালত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংক্ষেপে, ২০৩টি অতিরিক্ত দায়রা আদালত এবং ৩৬৭টি যুগ্ম দায়রা আদালত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের ফৌজদারি বিচার বিভাগের কার্যক্রম আরও গতিশীল করা হলো এমনটি বিশেষজ্ঞগণ মনে করছেন।

ফৌজদারী আদালতের কাজ কি? ফৌজদারি আদালতের প্রধান কাজ হলো অপরাধের বিচার এবং অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া। এটি এমন একটি আদালত, যেখানে ফৌজদারি আইন অনুসারে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিচার করা হয়। দেওয়ানি আদালতের মতো এটি ব্যক্তিগত অধিকার নিয়ে কাজ করে না, বরং সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য অপরাধীদের বিচার করে। ফৌজদারি আদালতের কিছু প্রধান কাজ হলো:

অপরাধের বিচার: চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, প্রতারণা, মাদক পাচার, অর্থ আত্মসাৎ, এবং অন্যান্য গুরুতর অপরাধের বিচার করা হয় ফৌজদারি আদালতে।

শাস্তি নির্ধারণ: কোনো ব্যক্তি অপরাধী প্রমাণিত হলে আদালত তার অপরাধের মাত্রা ও গুরুত্ব অনুযায়ী জেল, জরিমানা, বা অন্যান্য শাস্তি নির্ধারণ করে।

আদেশ জারি: ফৌজদারি আদালত অপরাধের তদন্তের জন্য পুলিশকে আদেশ দিতে পারে, আসামিকে গ্রেফতারের জন্য পরোয়ানা জারি করতে পারে, এবং জামিন সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

আপিল ও পুনর্বিবেচনা: নিম্ন আদালতের রায় নিয়ে অসন্তুষ্ট পক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারে এবং ফৌজদারি আদালত সেই আপিলগুলো বিচার করে।

সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: ফৌজদারি আদালত অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি দিয়ে সমাজের শান্তি, নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সংক্ষেপে, ফৌজদারি আদালত হলো আইন লঙ্ঘনকারী অপরাধীদের বিচার এবং শাস্তি দেওয়ার জন্য গঠিত একটি আইনি ব্যবস্থা, যা সমাজের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অপরিহার্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *