সূচীপত্র
বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস গণনায় আগামী ৬ সেপ্টেম্বর শনিবার পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হবে- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৫ কত তারিখ?
ঈদে মিলাদুন্নবী কি? – ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী মাওলিদ আন-নাবী, কখনো কখনো সহজভাবে বলা হয় মাওলিদ, মেভলিদ, মেভলিট, মুলুদ আরো অসংখ্য উচ্চারণ রয়েছে। কখনো কখনোমিলাদ) হচ্ছে শেষ নবীর জন্মদিন হিসেবে মুসলমানদের মাঝে পালিত একটি উৎসব। ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী হচ্ছে শেষ নবীর জন্মদিন হিসেবে মুসলমানদের মাঝে পালিত একটি উৎসব। মুসলিমদের মাঝে এ দিনটি বেশ উৎসবের সাথে পালন হতে দেখা যায়। তবে উৎসব নিয়ে ইসলামি পণ্ডিতদের মাঝে অনেক বিতর্ক রয়েছে। হিজরি বর্ষের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল-এর বারো তারিখে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আগামী ৬ সেপ্টেম্বর শনিবার পালিত হবে । বাংলাদেশের কোথাও ১৪৪৭ হিজরি সনের রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি । এর ফলে, ২৫ আগস্ট সোমবার সফর মাস ৩০ দিন পূর্ণ হবে । পরবর্তীতে, ২৬ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস গণনা শুরু হবে । এই সিদ্ধান্তটি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিকের সভাপতিত্বে বায়তুল মুকাররমের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় নেওয়া হয় ।
ঈদে মিলাদুন্নবী কি ও কেন । ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল । ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ
বাংলাদেশ সরকার এবং জনগন ঈদ ই মিলাদুন্নবী পালন করে থাকে।
Caption: EID -E Miladunnabi Leave in Bangladesh
ঈদ ই মিলাদুন্নবী ২০২৫। কেন আপনি ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করবেন?
- আল্লাহ সুরা আম্বিয়ার ১০৭নং আয়াতে এরশাদ করেন অর্থঃ “আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।” আল্লাহ এখানে রাসুলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সমগ্র জাহানের জন্য রহমত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আবার সূরা ইউনুস:৫৮ এ আল্লাহ এরশাদ করেন – “আপনি বলে দিন, তারা যেনো আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশি উদযাপন করে। এ (খুশি ও আনন্দ উদযাপন) তাদের সমুদয় সঞ্চয় থেকে উত্তম।” সুবহানআল্লাহ। - ১ম আয়াতে আল্লাহ রাসুলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাহমাত বলছেন এবং ২য় আয়াতে আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন এই রাহমাত (অর্থাৎ রাসুলকে) পেয়ে খুশি উদযাপন করতে। শুধু উদযাপনই নয় বরং এই খুশি উদযাপন করাটা তাদের সমস্ত সঞ্চয় (আমল) থেকে উত্তম বলে স্বয়ং আল্লাহ ঘোষনা দিয়েছেন। রাইসুল মুফাসসিরিন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ সহ অনেক মুফাসসিরীন এ বিষয়ে একমত যে, উক্ত আয়াতে বর্ণিত ‘ফাদল’ (অনুগ্রহ) ও ‘রাহমাত’ দ্বারা রাসুলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। এছাড়াও বুখারী শরীফে ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত রয়েছে যে,”মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নি’মাত।” (বুখারী ২/৫৬৬)।
- সূরা আল ইমরান:১৬৪ – “আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন।” এখানেও আল্লাহ বোঝাতে চাচ্ছেন যে রাসুলকে প্রেরন করে তিনি মুমিনদের উপর অনেক বড় এহসান করেছেন, তাই এই নেয়ামত পাওয়ার জন্য তাদের খুশি উদযাপন করা উচিৎ। সূরা আল বাক্বারাহ:২৩১ -“আল্লাহর নির্দেশকে হাস্যকর বিষয়ে পরিণত করো না। আল্লাহর সে অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যা তোমাদের উপর রয়েছে ।” এখানেও আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ তথা নবিজীর কথা স্বরন করার আদেশ দিয়েছেন।
- এছাড়াও পবিত্র কোরআনের আলোকে জানা যায়, আল্লাহর নে’মাত প্রাপ্তিতে খুশি উদযাপন করা নবীদেরই সুন্নাত। যেমন ঈসা (আঃ) যখন আল্লাহর দরবারে নিজ উম্মতের জন্যে খাদ্য চেয়েছিলেন, তখন এভাবে আরজ করলেন, সূরা মায়েদা-১১৪ অর্থঃ “হে আল্লাহ আমাদের রব! আসমান থেকে আমাদের জন্যে নেয়ামতের খানা অবতীর্ণ করুন, যা আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের জন্যে ঈদ হয়ে যায়।” কোরআনের এ আয়াতে ঈসা আঃ এ আশাই ব্যক্ত করেছেন যে, যেদিন আল্লাহপাকের নেয়ামত অবতীর্ন হবে, সেদিনটি ঈদ হিসেবে পালিত হোক পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল উম্মতের জন্য; যা ওই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের একটি উত্তম পন্থা।
ঈসা আঃ যদি সামান্য জান্নাতি খাবার পেয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারেন তাহলে আমরা রাহমাতুল্লিল আলামিনকে (যাকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ কিছুই সৃষ্টি করতেননা) পেয়ে কেনো ঈদ উদযাপন করতে পারবো না? তাঁর চেয়ে বড় নেয়ামত আর কি আছে বা হতে পারে বা কখনও হবে? বরং এদিন ঈদ মানানো ঈসা আঃ এর ঈদ মানানোর চেয়ে কোটিগুন উত্তম। তাই মিলাদুন্নাবি পালন করা কুরআন হতে প্রমাণিত, আলহামদুলিল্লাহ। - রাসুলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি নিজের মিলাদ নিজেই পালন করেছেন?
হ্যাঁ, তিনি করেছেন। কেননা হযরত আবু কাতাদা (রা) হতে বর্ণিত, একজন সাহাবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে আরজ করলেন “ইয়া রাসুলাল্লাহ আমার মাতা পিতা আপনার কদমে কুরবান হোক। আপনি প্রতি সোমবার রোজা পালন করেন কেনো?
জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এই দিনে আমি জন্মগ্রহন (আগমন) করেছি এবং এই দিনেই আমার উপর ওহী নাজিল হয়েছে। (সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, ৮১৯ পৃষ্ঠা, বায়হাকী: সুনানে কুবরা, ৪র্থ খন্ড ২৮৬ পৃ: মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ৫ম খন্ড ২৯৭ পৃ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪র্থ খন্ড ২৯৬পৃ: হিলয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃ:)।
দেখুন রাসুল স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছরে নয় বরং প্রতি সপ্তাহে নিজের শুভাগমন পালন করেছেন। তাহলে আমাদের প্রতি বছরে উদযাপন করাটা কোন ভিত্তিতে অবৈধ হতে পারে? - রাসুলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পেয়ে খুশি হওয়ার ফলাফলঃ হযরত আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি। সে আমাকে বলে “কবরের জিন্দেগীতে আমি শান্তিতে নেই। কিন্তু হ্যাঁ, প্রত্যেক সোমবার তর্জনী আঙ্গুল থেকে আমি মিস্টি পানি পেয়ে থাকি কেননা আমি ছুয়াইবা নামক বাদীকে (নবীজীর মিলাদের সংবাদ দেয়ায় খুশী হয়ে) আযাদ করেছিলাম এ আঙ্গুলের ইশারায়। “(সহিহ বুখারী কিতাবুন নিকাহ-৫১০১নং হাদিস)। এই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হজরত আব্বাস রাঃ বলেন আবু লাহাবের এই সোমবারের শাস্তি লাঘবের কারণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের খবর আবু লাহাবকে দিলে সে খুশি হয়ে সুয়াইবাকে (খবরকারী দাসী) আজাদ করেছিল। (ফাতহুল বারি সরহে সহীহুল বুখারী ,৯ম খন্ড,১১৮ পৃষ্ঠা, ইমাম ইবনে হাজার আসক্বালানী)।
- এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল আবু লাহাবের মত কাফের যার ধ্বংস হওয়ার ব্যপারে কুরআনে সুরা নাযিল হয়েছে, যার স্থান সর্বদাই জাহান্নাম, সে যদি নবীজির জন্মদিবসের সংবাদে খুশি হয়ে মাত্র একটি দাসী আযাদ করলে প্রতি সোমবার জাহান্নামে আল্লাহ তাকে পানি দান করেন, তাহলে আমরা যারা মুমিন সুন্নি মুসলমান, নবি প্রেমিক তারা মিলাদুন্নাবি পালন করলে আল্লাহ কি আমাদের উত্তম প্রতিদান দিবেন না? ইন শা আল্লাহ অবশ্যই দিবেন, কেননা তিনিই বলেছেন নবিকে পেয়ে খুশি উদযাপন করা সকল সঞ্চয়কৃত আমলের চেয়ে উত্তম (সুরা ইউনুস ৫৮)। আলহামদুলিল্লাহ।
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ না নাজায়েজ??
হ্যাঁ। মিলাদুন্নাবীর মাসে আরেকভাবে ফিৎনা ছড়ানো হচ্ছে একথা বলে যে, রাসুলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মতারিখের নাকি ঠিক নেই!! অথচ জন্মতারিখের কয়েকটি হাদিস বিদ্যমান রয়েছে। যেখানে হযরত আফফান রাঃ হতে বর্নিত, হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, “রাসুলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম(শুভাগমন) হস্তি বাহিনী বর্ষের ১২ই রবীউল আউয়াল সোমবার হয়েছিল।” (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা; বুলূগুল আমানী ফী শরহিল ফাততিহর রব্বানী’ ২য় খণ্ড, ১৮৯ পৃঃ বৈরুতে মুদ্রিত; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ’ ২য় খণ্ড, ২৬০ পৃঃ বৈরুতে মুদ্রিত)।