সূচীপত্র
বাংলাদেশে দখলস্বত্ব আইন বাতিল হওয়ার ফলে এখন দলিল যার ভূমি তার আইন ২০২৪ কার্যকর রয়েছে- জমি দখলে না থাকলে এখন আইনি সহায়তা নিয়ে দখলে আসা যাবে- জমি দখল আছে দলিল নাই
অন্যের জমি দখলের শাস্তি কি?– অন্যের জমি নিজের দখলে রাখা, ভুয়া বা মিথ্যা দলিল তৈরি এবং নিজ মালিকানার বাইরে অন্য কোনো জমির অংশবিশেষ উল্লেখ করে দলিল হস্তান্তরে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইন ২০২৩ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এ সংক্রান্ত ’ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার–২০২৩’ ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। তাই ভূমি আইনে অপরাধের ক্যাটাগরি দেখুন এবং এসব অপরাধ হতে দূরে থাকুন।
জমির দলিল বলতে কি শুধু রেজিস্ট্রি দলিল বোঝায়? – না। দলিল অর্থে ভূমির মালিকানা হস্তান্তর বা বণ্টনের উদ্দেশ্যে সম্পাদিত বা কৃত যে কোনো দলিল, বায়না দলিল, রসিদ, আম মোক্তারনামা, নকশা, স্কেচ, ম্যাপ, হাত, নকশা, খতিয়ান, ডুপ্লিকেট কার্বন রসিদ, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা, বরাদ্দপত্র, ছাড়পত্র, অনাপত্তিপত্র, এফিডেভিট এবং এতদ্সংক্রান্ত অন্য কোনো দলিলও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে। আমার যে দলিল নাই, দলিল বলতে অন্যান্য নথিকেও বোঝায়।
কোন আদালতে ভূমি অপরাধের বিচার হবে? ভূমি প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ, ভূমি জালিয়াতি সংক্রান্ত অপরাধ প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে বিচার কার্য অনুষ্ঠিত হইবে। মাত্র ৬ মাস বা ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার কার্য শেষ করতে হবে। ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান প্রযোজ্য হইবে। শুধুমাত্র দেওয়ানি আদালতে সীমা বন্ধ হইবে না। ভূমি প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ, ভূমি জালিয়াতি সংক্রান্ত অপরাধ, অবৈধ দখলচ্যুত ব্যক্তির দখল পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত আদেশ এবং অপরাধ পুনঃসংগঠনের বিচার ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ তফসিলভুক্ত হওয়া সাপেক্ষে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচার করা যাবে।
বেদখল জমি দখলে পেতে এখন ভূমি অফিসেই মামলা করা যায় এবং সম্পত্তি ফিরে পেতে ভূমি অফিস প্রশাসনিক সহায়তা প্রদানের ক্ষমতা রাখে / অন্যদিকে আপীল বিভাগ এখন জেলা শহরে স্থাপন করা হয়েছে।
১২ বছর জমি দখলে রাখলেই নিজের হয়? পূর্বের দখল স্বত্ব আইন অনুযায়ী, কোনো সম্পদ ১২ বছর নিজের দখলে রাখতে পারলেই তার মালিকানা দাবি করা যায়। আইনটি বাতিল করে নতুন ভূমি আইন ২০২৩ অনুযায়ী জমির মালিকানা নির্ধারণ হবে দলিলের ভিত্তিতে অর্থাৎ যার নামে দলিল থাকবে তিনিই ওই ভূমির মালিক তাই শাস্তি হতে বাঁচতে সতর্ক থাকুন।
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৪ । যে অপরাধে যে শাস্তি কার্যকর হইবে
- অনুচ্ছেদ ৭। (১) State Acquisition and Tenancy Act, 1950 (Act No. XXVIII of 1951) এর section 143 বা 144 এর অধীন প্রণীত হালনাগাদকৃত বলবৎ সর্বশেষ খতিয়ান মালিক অথবা তাহার নিকট হইতে উত্তরাধিকারসূত্রে বা হস্তান্তর বা দখলের উদ্দেশ্যে আইনানুগভাবে সম্পাদিত দলিল বা আদালতের আদেশের মাধ্যমে মালিকানা বা দখলের অধিকার প্রাপ্ত না হইলে, কোনো ব্যক্তি উক্ত ভূমি স্বীয় দখলে রাখিতে পারিবেন না।
- (২) আইনানুগভাবে দখলের অধিকারপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে উপযুক্ত আদালত বা কর্তৃপক্ষের আদেশ ব্যতীত তাহার দখলীয় ভূমি হইতে উচ্ছেদ বা দখলচ্যুত করা যাইবে না এবং তাহাকে উক্ত ভূমির দখল বা উহাতে প্রবেশে বাধা প্রদান করা যাইবে না।
- ১) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) বা (২) এর বিধান লংঘন করেন, তাহা হইলে তাহার অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২(দুই) বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন:
- তবে শর্ত থাকে যে, উত্তরাধিকারসূত্রে বা হস্তান্তরের মাধ্যমে মালিকানাপ্রাপ্ত ভূমির দখলদার ব্যক্তি রেকর্ড সংশোধন বা স্বীয় স্বত্ব ঘোষণার দাবিতে মামলা বা অন্য কোনো কার্যধারা দায়ের করিয়া থাকিলে তাহার উক্ত কার্য এই ধারার অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।
ভূমি অপরাধের দণ্ড কি কি?
ভূমি প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ এবং ভূমি জালিয়াতি সংক্রান্ত অপরাধে অনধিক ৭(সাত) বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড প্রদান করা হবে। অন্যান্য অপরাধে অনধিক ২(দুই) বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড প্রদান করা হবে। একই অপরাধ পুনঃসংগঠন করলে দণ্ড দিগুণ হবে। তাই কোন অপরাধ একাধিকবার করার আগে ভেবে দেখুন।
‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে এবং ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে কার্যকর হয়েছে। এতদিন যাবত ভূমি সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলাগুলো দন্ডবিধির ৪০৬/৪২০/৩৭৯/৪৪৭/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ প্রভৃতি ধারার অধীনে দায়ের হতো। নতুন আইনে ভূমি সম্পর্কিত অপরাধগুলোকে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।
নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৪ । ভূমি নিবন্ধন, ফিস ও অন্যান্য আইন দেখুন