সূচীপত্র
উত্তরাধিকার বা ক্রয়কৃত সম্পত্তির বন্টনজনিত ঝামেলা মেটাতে বন্টন মামলা করতে হয়-মূলত আপসে বন্টন হওয়াই শ্রেয় কারণ মামলার মাধ্যমে বন্টন বা বাটোয়ারা খুবই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার – Partition Suit বা সম্পত্তি বন্টনের মামলা
সম্পত্তি বন্টনের মামলা কি? সম্পত্তি বন্টন হলো একটি প্রক্রিয়া যা অনুযায়ী একটি ব্যক্তির অর্থায়ন, অর্জন এবং বিতরণ নির্ধারণ করে। সম্পত্তি বন্টন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেটি বাংলাদেশের আইনে নিয়মিত করা হয়ে থাকে। এটি একটি সময়সীমিত প্রক্রিয়া হতে পারে এবং প্রতিটি সন্তানের সমান অংশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে করা হয়। সাধারণত, সম্পত্তি বন্টন করা হয় একটি মৃত ব্যক্তির মালিকানাধীন সম্পত্তি বিতরণের জন্য, তবে এটি আপনার নিকট সম্পত্তি বন্টনের সম্পর্কে বিশদভাবে আপনার প্রশ্ন জানাতে হবে। আপনার বাংলায় কি কোনও সুত্র বা নিয়ম আছে কিনা তা বলার জন্য অনুগ্রহ করে অতিরিক্ত তথ্য প্রদান করুন।
ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির সীমানা চিহ্নিত করে যার যার প্রাপ্ত স্বত্ব বুঝে নেবার প্রক্রিয়াটি হচ্ছে “বণ্টন”। স্থানীয় বা পারিবারিকভাবে বণ্টনের আইনগত ভিত্তি দুর্বল। উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন করার জন্য আইনানুগ পদ্ধতি অবলম্বন করাটাই শ্রেয়। এ জন্য সকল শরিককে এখতিয়ার সম্পন্ন দেওয়ানী আদালতে একটি মামলা করতে হয় যা বণ্টন মোকদ্দমা বা বাটোয়ারা মামলা বা পার্টিশন স্যুট নামে পরিচিত। সম্পত্তির শরিক দুই প্রকার। (ক) উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক বা কো-শেয়ারার বাই ইনহেরিটেন্স (খ) খরিদ সূত্রে শরিক বা কো-শেয়ারার বাই পারচেজ। বণ্টনের মামলা করার সময় সকল শরিকগণ মামলায় পক্ষভুক্ত হতে হবে। কোন একজন শরিক বাদ থাকলে বণ্টননামা শুদ্ধ হবেনা। যদি শরিকগণ আপোষ মতে বণ্টন করতে রাজী না হন তাহলে যে কোন শরিক বণ্টনের জন্য আদালতে উক্ত সম্পত্তির বণ্টন চেয়ে মামলা করতে পারেন।
মামলা দায়ের ও আরজি গ্রহণ করার নিয়ম কি? দেওয়ানী মামলা শুরু হয় আরজি গ্রহণের মাধ্যমে। দেওয়ানী আদালতের সেরেস্তাদার বা তার অনুপস্থিতিতে সেরেস্তাদার হিসেবে কর্মরত কর্মচারী মামলার আর্জি গ্রহণ করে আরজির গায়ে বা তার সাথে যুক্ত অর্ডারশিটে বা স্লিপে মামলার ফাইলিং নম্বর লিখবেন। যেমন- দেওয়ানী মামলা নং – ১০০/২০১২(এর অর্থ হল ঐ আদালতের ২০১২ সালের ১০০ নম্বর দেওয়ানী মামলা)।
বন্টনা বা বাটোয়ার মামলার সুনির্দিষ্ট বিধিমালা বা নীতিমালা না থাকায় ১৮৯৩ সালের বাটোয়ারা আইনের অধীনে বাটোয়ারা মামলা করা হয়।
মামলা করার জন্য কোর্ট ফি দিতে হয় ১০০ টাকা কিন্তু ছাহাম চাইলে প্রতি ছাহামের জন্য অতিরিক্ত ১০০ ফি জমা দিতে হয়।
বণ্টন হওয়ার পর করণীয় কি? আদালতের মাধ্যমে বণ্টন হওয়ার পর এবং বণ্টন দলিল রেজিস্ট্রি পর অবশ্যই নিজ নামে নামজারী, জমাভাগ খতিয়ান করে নিতে হবে। পাশাপাশি খাজনা প্রদান করতে হবে। মনে রাখবেন, নামজারী হচ্ছে সরকারিভাবে সম্পত্তিকে নিজ নামে রেকর্ড করা।
বাটোয়ারা বা বন্টন মামলার ধাপসমূহ ও পরবর্তী তথ্য ২০২৪ । যে সকল ধাপে মামলা নিষ্পত্তি হয় দেখে নিন
- প্রাথমিক ডিক্রী- এ ডিক্রীতে হিস্যানুযায়ী বণ্টন আদেশ দেয়া হয় ৷
- চূড়ান্ত ডিক্রী- এ ডিক্রীতে প্রয়োজনে আমিন কমিশন পাঠিয়ে সরেজমিনে সম্পত্তির দখল দেয়া হয় এবং সীমানা পীলার দ্বারা বিভাজন (জমির ভাগ) চিহ্নিত করার মাধ্যমে চূড়ান্ত ডিক্রী প্রচার করা হয় ৷ আদালত প্রয়োজনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করে সম্পত্তির সীমানা চিহ্নিত করে ডিক্রী প্রাপককে সম্পত্তির দখল দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন ৷
- বণ্টনের শর্ত সমূহ- বণ্টনের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত জড়িত; যেমন-পরিমাপ করে শরীকদের ভূমির বা জমির সীমানা চিহ্নিতকরণ করতে হবে এবং -বণ্টন তালিকায় প্রত্যেক সহ-মালিকের বরাদ্দকৃত সম্পত্তির উল্লেখ থাকতে হবে। তালিকায় মালিকানার বিভাজন সকল সহ-মালিক কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে। বণ্টনের বিবরণ সুস্পষ্ট হতে হবে। প্রত্যেকটি তালিকা সহ-মালিকবৃন্দ কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে। যথাযথভাবে স্ট্যাম্প শুল্ক দিয়ে দলিলটি রেজিস্ট্রি করতে হবে। সহ-শরীকগণ আপোষ বণ্টন করে পরবর্তীতে তাদের কেউ তা না মানলে দেওয়ানী আদালতের মাধ্যমে তা কার্যকর করা যায় ৷
- বণ্টন এবং বণ্টক দলিল- ১৮৯৯ সালের স্ট্যাম্প এক্টের ২ (১৫) ধারায় বলা হয়েছে বণ্টন দলিল ও বণ্টক দলিল অর্থ একই ৷ যখন কোন সম্পত্তির সহ-শরিকগণ তাদের সম্পত্তি ব্যক্তিগত মালিকানায় পৃথকভাবে ভাগ করে নেয় বা নিতে সম্মত হয়ে কোন দলিল করে তাকেই বণ্টন বা বণ্টক দলিল বলে।
- বণ্টননামা দলিলের রেজিস্ট্রিকরণ -রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন ২০০৪ আইনের ১৭(১) ধারার বিধান অনুসারে বাটোয়ারা বা আপোষ-বণ্টননামা রেজিস্ট্রি করতে হবে, অর্থাৎ রেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক।
- বাটোয়ারা দলিল খরচ- সকল সহ-শরিকের মধ্যে জমি হিস্যানুযায়ী (স্ট্যাম্প এর উপর) বণ্টন করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করে বণ্টননামা দলিল রেজিস্ট্রি করা যায় ৷ এ দলিল রেজিস্ট্রির জন্য স্ট্যাম্প খরচ লাগবে জমির যে মূল্য লেখা হবে তার ২% হারে ৷ এছাড়া অন্যান্য ফিস কবলা দলিল রেজিস্ট্রিতে যেমন লাগে অনুরূপ লাগবে ৷ (তবে এই হার সরকার কর্তৃক সময় সময় পরিবর্তনযোগ্য)।
বাটোয়ার বা বণ্টন মামলা করার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগে?
বাটোয়ারা বা বণ্টন মোকদ্দমা দায়েরের জন্য একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। পাশাপাশি সম্পত্তির মালিকানা সংশ্লিষ্ট সকল কাগজ পত্র যেমন ভূমি জরিপ খতিয়ান, নামজারী খতিয়ান, মালিকানা দলিল, উত্তরাধিকার সনদ ইত্যাদি সংগ্রহে রাখতে হবে। মামলা করার জন্য কোর্ট ফি দিতে হয় ১০০ টাকা কিন্তু ছাহাম চাইলে প্রতি ছাহামের জন্য অতিরিক্ত ১০০ ফি জমা দিতে হয়। বাটোয়ারা মামলায় সাধারণত প্রত্যেক দাগের জমি সকল সহ-শরীক এর মধ্যে বণ্টিত হয়ে থাকে ৷ বাটোয়ারা বা বণ্টন মামলায় ২ বার ২টি ডিক্রী হয় ৷