সূচীপত্র
যৌন হয়রানি ও এর কুফল সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা- যৌন হয়রানি শাস্তিযোগ্য অপরাধ-এ বিষয়ে অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা-যৌন হয়রানিমূলক অপরাধ প্রতিরোধ ও নিবৃত্ত করার জন্য একটি কার্যকরী পন্থা গ্রহণ করা হবে- যৌন হয়রানি নিরসন আইন ২০২৫
যৌন হয়রানি সংক্রান্ত মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রীট পিটিশন নং ৫৯১৬/২০০৮ এ প্রদত্ত ১৪.৫.২০০৯ ইং তারিখের রায়ের নির্দেশনার আলোকে “যেহেতু কর্মক্ষেত্রে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যৌন নির্যাতন এবং হয়রানির বিরুদ্ধে নিরাপত্তার অপর্যাপ্ততা রয়েছে, যেখানে আমাদের সংবিধানের অনেক অনুচ্ছেদে লিঙ্গ বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে এবং লিঙ্গ সমতার চরিত্রায়নে মহৎ অঙ্গীকারাবদ্ধ, কিন্তু প্রতিদিনই জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে তা হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে এই প্রেক্ষিতে কিছু নির্দেশনা প্রদান করা হলো যা কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুসরণ ও পালন করা হবে, যতদিন না পর্যন্ত পর্যাপ্ত এবং যথাযথ আইন এই ক্ষেত্রে প্রণীত হচ্ছে। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য অধিদফতরের “যৌন নির্যাতন ও হয়রানি নিরসন এবং প্রতিরোধ” বিষয়ক এ নীতিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বলতে কি বুঝায়? যৌন আবেদনমূলক আচরণ (সরাসরি কিংবা ইঙ্গিতে) যেমন: শারীরিক স্পর্শ বা এ ধরনের প্রচেষ্টা। প্রশাসনিক, কর্তৃপক্ষীয় এবং পেশাগত ক্ষমতা অপব্যবহার করে কারো সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা; গ. যৌন হয়রানি বা নিপীড়নমূলক উক্তি। যৌন সুযোগ লাভের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত দাবি বা আবেদন। পর্নোগ্রাফি দেখানো এবং যৌন আবেদনমূলক মন্তব্য বা অঙ্গভঙ্গি প্ৰদৰ্শন। অশোভন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন, যৌন নির্যাতনমূলক ভাষা বা মন্তব্যের মাধ্যমে উত্ত্যক্ত করা, কাউকে অনুসরণ করা, যৌন ইঙ্গিতমূলক ভাষা ব্যবহার করে ঠাট্টা বা উপহাস যৌন হয়রানি অন্তর্ভূক্তি হিসেবে গন্য হইবে।
মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা কি? চিঠি, টেলিফোন, মোবাইল, এসএমএস, ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ছবি, নোটিশ, কার্টুন এর মাধ্যমে অপমান, চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ, নোটিশ বোর্ড, অফিস, ফ্যাক্টরি, শ্রেণিকক্ষ, দেয়ালে যৌন ইঙ্গিতমূলক অপমানজনক কিছু লেখা এবং ব্লাকমেইলিং অথবা চরিত্র লঙ্ঘনের উদ্দেশ্যে স্থির চিত্র এবং ভিডিও ধারণ করা। যৌন নিপীড়ন বা হয়রানির উদ্দেশ্যে খেলাধুলা, সাংস্কৃতি, প্রতিষ্ঠানিক এবং শিক্ষাগত কার্যক্রমে অংশ করতে অথবা অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করা। প্রেম নিবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়ে হুমকি দেওয়া বা চাপ প্রয়োগ করা। ভয় দেখিয়ে বা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বা প্রতারণা/ছলনার মাধ্যমে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা বা করার চেষ্টা করা ।উপরেল্লিখিত আচরণসমূহ অপমানজনক এবং কর্মস্থলে নারীর স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
হাইকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনায় জেন্ডার বৈষম্যের কথা উল্লেখ থাকলেও এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই । সংস্থার জেন্ডার পলিসিতে জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয় বলা হয়েছে।
প্রজাতন্ত্রের সংবিধানের একাধিক অনুচ্ছেদে জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সংবিধানে রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার ও আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী মর্মে বলা হয়েছে, তাই নিয়োগদাতা এবং অন্যান্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো কর্মক্ষেত্রে যৌন নির্যাতন ও যৌন হয়রানিমূলক অপরাধ প্রতিরোধ ও নিবৃত্ত করার জন্য একটি কার্যকরী পন্থা গ্রহণ করা এবং যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অপরাধ বিচারকার্যে সম্ভাব্য আইনের আশ্রয় লাভ এবং প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্বও তাদের উপর বর্তাবে।
Caption: Full pdf download
কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ২০২৫ । দপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে
- ক.অভিযোগ গ্রহণ, তদন্ত এবং সুপারিশ করার জন্য তথ্য অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়সহ আঞ্চলিক তথ্য অফিসসমূহে সকল অফিসের জন্য পৃথক পৃথক কমিটি গঠন করে তা নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। অভিযোগ কমিটি নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে;
- খ.কমপক্ষে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করতে হবে যার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য হবে নারী। নারী সদস্যকে কমিটির প্রধান মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রধান্য দিতে হবে;
- গ. অভিযোগ কমিটির নূন্যতম দুইজন সদস্য তথ্য অধিদফতরের বাইরের অন্য অফিস থেকে নেওয়া হবে।
- ঘ. অভিযোগ কমিটি কর্তৃপক্ষের নিকট মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক এ নীতিমালা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বাৎসরিক প্রতিবেদন জমা দিবে এবং কর্তৃপক্ষ সরকারের নিকট প্রতিবেদন জমা দিবে;
- ঙ. অভিযোগ কমিটির সদস্যবৃন্দের নাম, পরিচয়, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা প্রকাশ্য ও দৃশ্যমান স্থানে টাঙ্গিয়ে রাখতে হবে এবং তথ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে।
দপ্তরে অভিযোগ বাক্স থাকতে হবে?
হ্যাঁ। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখা হবে। কর্তৃপক্ষ অভিযোগকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে। অভিযোগ দায়ের করার ক্ষেত্রে অপরাধের শিকার ব্যক্তি নিজে অথবা তার কোনো আত্নীয়, বন্ধু অথবা আইনজীবীর মাধ্যমে সরাসরি হাজির হয়ে, ডাকযোগে, এসএমএস এবং ই-মেইলের মাধ্যমে করতে পারবেন। অভিযোগকারী প্রয়োজনবোধে পৃথকভাবে অভিযোগ কমিটির নারী সদস্যর কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন; ঙ.তথ্য অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়সহ আঞ্চলিক তথ্য অফিসসমূহে সকল অফিসে দৃশ্যমান এবং কর্মকর্তা- কর্মচারীদের জন্য সুবিধাজনক স্থানে অভিযোগ বাক্স স্থাপন নিশ্চিত করা হবে। অভিযোগকারী যাতে বিনা বাধায় অভিযোগ বাক্সে অভিযোগ রাখতে পারেন কর্তৃপক্ষ সেটা নিশ্চিত করবে। অভিযোগ বাক্সটি অভিযোগ কমিটির যে কোনো সদস্য/দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়মিত উন্মুক্ত করে পরীক্ষা করবে এবং অভিযোগ পাওয়া গেলে তা উক্ত দিবসের অভিযোগ হিসেবে লিপিবদ্ধ করতে হবে।