ই নামজারি ও ভূমি কর

জমি ক্রয়ের পূর্বে ক্রেতার করণীয় ২০২৪ । যে সকল বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখলে উপার্জন হারাতে পারেন

ভাল জমি পেলেই হুট করে বায়না করে ফেলতে যাবেন না-জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে তারাহুরাই বিপদ ডেকে আনে-আপনার কষ্টে উপার্জিত অর্থ বাটপারের হাতে খোয়াতে পারেন-তাই যাচাই বাছাই করেই জমি ক্রয় করুন-জমি ক্রয়ের পূর্বে ক্রেতার করণীয় ২০২৪

হাল রেকর্ড থাকা কতটা জরুরি? নাবালকের সম্পত্তি কিনা অবশ্যই যাচাই করে নিন। নাবালকের সম্পত্তি আদালতের অনুমতি পত্র ছাড়া ক্রয় করলে ভবিষ্যতে নাবালক যদি মামলা করে তাহলে আপনি জমি হারাবেন। সম্পত্তিতে বিক্রেতার দখল আছে কি না নির্ণয় করার জন্য আশেপাশের জমি ওয়ালাদের কাছে খবর নিন যে, এই জমির প্রকৃত দখলদার কে ? হাল রেকর্ড অনুযায়ী খতিয়ান ও দাগ নম্বর সঠিক আছে কি না ভালো করে দেখে নিন। হাল রেকর্ড ও সাবেক রেকর্ড এর মধ্যে মিল রয়েছে কি না ভালো করে যাচাই করুন। হিস্যা মোতাবেক বিক্রেতার প্রাপ্য অংশ সঠিক আছে কি না যাচাই করে নিন তা না হলে ভবিষ্যতে মামলা-মোকদ্দমার সম্মুখীন হতে পারেন।

খাস জমি কিনছেন না তো? রেন্ট সার্টিফিকেট মামলায় জড়িত সম্পত্তি কি না যাচাই করে নিন। হাল সন পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ আছে কি না যাচাই করে নিন। বিক্রেতার নামে নামজারি করা আছে কি না যাচাই করে নিন। অর্পিত/পরিত্যক্ত/অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি কি না যাচাই করে নিন। সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি কি না যাচাই করে নিন। নৃ-তাত্ত্বিক জাতি গোষ্ঠীর সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের “বিক্রয় অনুমতিপত্র” আছে কি না যাচাই করে নিন। খাস জমি কি না যাচাই করে নিন।

বন্টননামা দলিল হয়েছে কী? বিক্রিত জমিতে সরকারি কোন স্বার্থ জড়িত আছে কি না যাচাই করে নিন। সর্বসাধারণের ব্যবহার্য বা পাবলিক ইজমেন্ট সম্পত্তি কি না যাচাই করে নিন। বিক্রেতার মালিকানা সঠিক আছে কি না নির্ণয় করতে হবে। দলিল নাম্বার নিয়ে ভূমি অফিস অথবা তহসিল অফিসে খবর নিলে প্রকৃত মালিক জানতে পারবেন। জমির আশেপাশে যাদের জমি আছে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে জমির মালিকানা বিষয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। নাবালকের সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আইনগত অভিভাবক বা আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবক নির্ধারণ করা আছে কি না যাচাই করে নিন। বিক্রেতা সম্পত্তি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্য হইলে নিবন্ধিত বণ্টননামা দলিল আছে কি না যাচাই করে নিন।

জমি কেনা পূর্বে যেমন কিছু যাচাই বাছাই কাজ থাকে টিক জমি কেনা পরও কিছু জরুরি কাজ থাকে/ অনুগ্রহ করে র্ধৈয্য কার্য সম্পন্ন করুন

জমি রেজিস্ট্রি করার পর ক্রয়কৃত জমির দখল, সীমানা নির্ধারণ এবং জমি ব্যবহার তথা চাষাবাদ বা বাড়ীঘর নির্মাণ করতে হবে। রেজিস্ট্রি অফিস হতে মূল দলিল গ্রহন করা। মূল দলিল প্রাপ্তিতে বিলম্ব হলে দলিলের সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করতে হবে। মিউটেশন/নামজারী করার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর অফিসে দলিলের সত্যায়িত কপিসহ নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে মিউটেশন/নামজারী করানোর ব্যবস্থা করতে হবে।  নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করা হলে জমি নিলাম হয়ে যেতে পারে। ভালোভাবে জমির সীমানা চিহ্নিত করে না রাখলে অন্যেরা অনধিকার প্রবেশ করার সুযোগ পাবে।

Caption: List Should be checked

ক্রেতার যাচাই সম্পন্ন হওয়া ডকুমেন্টস ২০২৪ । যে ১৬টি বিষয় যাচাই করতেই হবে

  1. ভূমির মালিকানা ও দখল সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
  2. বিক্রেতার SA ও BS রেকর্ডীয় মালিকের স্বত্ব আছে কিনা যাচাই করতে হবে।
  3. রেকর্ডে একাধিক নাম থাকলে বিক্রেতা অংশ মোতাবেক উক্ত জমি পায় কিনা যাচাই করতে হবে।
  4. বিক্রেতা খরিদ সূত্রে মালিক হয়ে থাকলে তার নামে বিক্রিত ভূমি নামজারী ও জমা খারিজ হয়েছে কিনা। বিক্রেতা যার কাছ থেকে খরিদ করেছিলেন সেই দলিল, তার বায়া দলিল, রেকর্ডের নাম পর্যন্ত মালিকানা তা যাচাই করে দেখতে হবে।
  5. বিক্রেতার দেখানো খতিয়ান/পর্চা, দলিল, বায়া দলিল সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ভূমি অফিসে রক্ষিত রেকর্ডপত্রের সাথে মিল আছে কিনা ভূমি অফিসে গিয়ে যাচাই করতে হবে।
  6. বিক্রেতা ওয়ারিশ সূত্রে জমির মালিক হলে রেজিস্ট্রিকৃত আপোষ বন্টননামা দলিল আছে কিনা যাচাই করতে হবে।
  7. বিক্রেতা হাল নাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করছেন কিনা? ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা থাকলে দাখিলা যাচাই করতে হবে।
  8. পিতার ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত ভূমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রিত জমিতে অন্য ওয়ারিশগন প্রাপ্ত কিনা এবং দখল আছে কিনা যাচাই করে দেখতে হবে।
  9. বিক্রিত জমি বিক্রেতার দখলে আছে কিনা সরেজমিনে যাচাই করে দেখতে হবে।
  10. বড় ধরনের প্লটে জমি বিক্রি করলে বিক্রিত জমি কোন অংশে চৌহদ্দি উল্লেখ পূর্বক বিক্রিত জমি দখল চিহ্নিত করতে হবে।
  11. বিক্রিত জমিতে কোন সরকারি স্বার্থ জড়িত আছে কিনা যাচাই করতে হবে। যেমন-খাস, অর্পিত, পরিত্যক্ত, কোর্ট অফ ওয়ার্ড, ২৫ বিঘা, সিলিং বহির্ভূত, ওয়াকফ, দেবোত্তর অধিগ্রহণকৃত, কিনা ব্যাংক কর্তৃক ঋণ লওয়া আছে কিনা, বন্ধক দেওয়া আছে কিনা, সার্টিফিকেট মামলা, দেওয়ানী মামলা আছে কিনা ইত্যাদি যাচাই করতে হবে।
  12. বিক্রিত জমিতে যাতায়াতের কোন সরকারি বেসরকারি রাস্তা আছে কিনা যাচাই করতে হবে।
  13. বিক্রিত জমি বিক্রির জন্য অন্য কাউকে আমমোক্তার বা এ্যাটর্নী নিয়োগ করা আছে কিনা যাচাই করতে হবে।
  14. বিক্রিত জমি প্রতিবেশীদের সাথে বিরোধ আছে কিনা যাচাই করতে হবে।
  15. বিক্রিত জমি বিক্রেতা ইতিপূর্বে অন্য কাহারো নিকট বিক্রি করেছেন কিনা যাচাই করতে হবে।
  16. বিক্রিত দাগের ভূমি সংশ্লিষ্ট মৌজা ম্যাপের সাথে সরেজমিন সঠিক আছে কিনা যাচাই করতে হবে।

জমিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা নাই তো?

দু একটি কাগজপত্র যাচাই করেই ক্ষান্ত হবেন না। হিন্দু কন্যা সন্তান/বিধবা স্ত্রী এর “জীবন স্বত্ব” শর্তে প্রাপ্য সম্পত্তি কি না? সম্পত্তি বিক্রয়/হস্তান্তর এর ক্ষেত্রে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে কি না? সমর্পিত বা বিক্রেতার ৬০/১০০ বিঘা সিলিং বহির্ভূত সম্পত্তি কি না? নকশা মোতাবেক জমির অবস্থান ও পরিমাণ সঠিক আছে কি না যাচাই করে নিন। দলিলে বর্ণিত তফসিল অনুযায়ী রেকর্ড সঠিক আছে কি না? সম্পত্তি বন্ধক দেয়া আছে কি না? বিক্রেতা বায়না বা বিক্রয় চুক্তি সম্পাদন করেছেন কি না? বিক্রেতার প্রদর্শিত খতিয়ান ও দলিল সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে রক্ষিত রেকর্ডপত্রের সাথে মিল আছে কি না? বিক্রেতা তফসিল বর্নিত সম্পত্তি ইতি পূর্বে অন্য কারো নিকট বিক্রয় বা হস্তান্তর করেছে কি না? জমির মূল্য বাজার মূল্য থেকে যদি কম হয়ে থাকে তার কারন নির্ধারণ করে তারপর ক্রয় করুন।

জমি ক্রয়ের বিস্তারিত নিয়ম ২০২৪ । সম্পত্তি কিনে বিপদে না পড়তে চাইলে এখনই পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *