নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করুন অন্যথায় জমি খাস হয়ে যেতে পারে – ভূমি উন্নয়ন কর ও বিভিন্ন ফি ২০২৩

ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা কি? – প্রাচীনকাল থেকেই কৃষকরা জমির খাজনা প্রদান করতেন। মাধ্যম ছিল অর্থ অথবা উৎপাদিতফসল। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত খাজনার সঙ্গে শিক্ষা খাতের জন্য টাকা আদায় করা হতো।ফলে ওই সময়ের শিক্ষিতরা গরীব কৃষকের টাকায় লেখাপড়া করেছেন-বলে দাবী করা হয়।১৯৭৬ সালে ‘ভূমি উন্নয়ন কর অধ্যাদেশ’ এর মাধ্যমে খাজনা শব্দটি বাদ পড়েযায়। বর্তমানে খাজনাই হলো- ভূমি উন্নয়ন কর। এতে অন্যকোন সেস বা আবওয়াব বানজরানা আদায় করা হয়না। বাংলা সনের ভিত্তিতে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হয়।তিন বছর পর্যন্ত অগ্রিম ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করা যায়। কোনোজমি ভোগ দখলের সুবিধা গ্রহণের জন্য সরকারকে প্রতি শতাংশ জমির জন্য বছরভিত্তিক যে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রদান করতে হয় তাকেই ভূমি উন্নয়ন করবলে। ভূমি উন্নয়ন কর দেয়ার পর দাতা দাখিলা পাওয়ার অধিকার লাভ করেন। দাখিলাদেয়া না হলে তা অধ্যাদেশের লংঘন হবে। এই দাখিলা জমির মালিকানা প্রমাণেরগুরুত্বপূর্ণ দলিল।

বকেয়া ভূমি উন্নয়ন করের উপর কি হারে সুদ দিতে হয়? অনেকেরইভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া পড়ে থাকে। এক্ষেত্রে একটি ভুল ধারণা রয়েছে- তিনবছরের বেশি বকেয়া বাকী থাকলে তা আদায় করা যায়না। আসলে তা ঠিক নয়। বিধিমালা এবিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছে। তবে তিন বছরের মধ্যেই আদায়ের জন্য রেন্টসার্টিফিকেট মামলা দায়ের করতে হয়। এই মামলার মাধ্যমেই জমি নিলামে বিক্রিকরা হয়। কোন ক্রেতা পাওয়া না গেলে সরকার এক টাকা দিয়ে এ জমি কিনে খাসজমিতেপরিণত করে তা ভূমিহীনদের মধ্যে বন্দোবস্ত দিতে পারে। এ কারণে প্রতি বছরইভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা উচিত। তবে বকেয়া পড়ে গেলে যেই বছর হতে কর বকেয়ারয়েছে তা ওই বছরের হার অনুযায়ী আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে ৬.২৫ ভাগ সুদজ্যামিতিক হারে যোগ করতে হবে।

প্রতি শতাংশ ভূমি ভূমিকর ১০ টাকা? বাংলা ১৩৭৮ সনে স্বাধীনতা অর্জিত হলে আগের অনাদায়ী সকল খাজনা মওকুফ করে বাংলা ১৩৭৯ সন থেকে খাজনা ধার্য করা হয়। বাংলা ১৩৮২ সন পর্যন্ত কোন পরিবারের ২৫বিঘা বা ৮.২৫ একর এর উর্দ্ধে জমির জন্য খাজনা ও শিক্ষা কর ছিল। ২৫ বিঘার কমজমির জন্য শুধু শিক্ষা কর দিতে হতো। বাংলা ১৩৮৩ সন (১৯৭৬ সাল)থেকে বাংলা ১৩৮৮ সন পর্যন্ত ২৫ বিঘা পর্যন্ত বিঘা প্রতি (৩৩ শতাংশ) এর জন্য ৯০ পয়সা এবং ২৫ বিঘার উর্দ্ধে বিঘা প্রতি ৫ টাকা খাজনা ছিল। বাংলা ১৩৮৯ সনথেকে বাংলা ১৩৯৩ সন পর্যন্ত ২ একর জমির জন্য শতাংশ প্রতি ৩ পয়সা, ২ একরথেকে ৫ একর পর্যন্ত জমির জন্য প্রথম দুই একরের জন্য ৬ টাকা এবং পরবর্তীপ্রতি শতাংশের জন্য ১৫ পয়সা।

৫ একর থেকে ১০ একর পর্যন্ত জমির জন্য প্রথম ৫ একরের জন্য ৫১ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি শতাংশের জন্য ৩৬ পয়সা। ১০ একর হতে ১৫একর পর্যন্ত প্রথম ১০ একরের জন্য ২৩১ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি শতাংশের জন্য৬০ পয়সা। ১৫ একর থেকে ২৫ একর পর্যন্ত প্রথম ১৫ একরের জন্য ৫৩১ টাকা এবংপরবর্তী প্রতি শতাংশের জন্য ৬০ পয়সা। ২৫ একরের উপর হলে প্রথম ২৫ একরের জন্য ১৪৮১ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি শতাংশের জন্য ১ টাকা ৪৫ পয়সা। বাংলা ১৩৯৪ সন (১৯৮৭ সাল) থেকে বাংলা ১৪০১ সন (১৯৯৪ সাল) পর্যন্ত ২ একর জমির জন্যশতাংশ প্রতি ৩ পয়সা, সব মিলিয়ে এক টাকার কম নয়। ২ একর থেকে ৫ একর পর্যন্ত জমির জন্য শতাংশ প্রতি ৩০ পয়সা। ৫ একর থেকে ১০ একর পর্যন্ত শতাংশ প্রতি ৫০পয়সা। ১০ একরের বেশি জমি হলে শতাংশ প্রতি ২ টাকা। বাংলা ১৩৯৮ সনের ১ বৈশাখ থেকে ২৫ বিঘা বা ৮.২৫ একর পর্যন্ত কৃষি জমির ওপর থেকে সকল ধরনের কর প্রত্যাহার করা হয়। ভূমিকর হার ২০১৫ মোতাবেক পৌর এলাকা নয় এমন ক্ষেত্রে প্রতি শতাংশ ১০ টাকা কর পরিশোধ করতে হয়।

জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম ২০২৩ । বাড়ির জমির খাজনা কত । ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ রশিদ ফরম অনলাইন হতে সংগ্রহ করতে হবে

খাজনা নাকি অনলাইনে পরিশোধ করা যায়? হ্যাঁ। যায়।  ভূমি উন্নয়ন কর১ বছরের বকেয়া হলে সংশ্লিষ্ট বাংলা সনের ৩০শে চৈত্রের পরই উক্ত কর বকেয়াবলে গন্য হবে এবং মূল পাওনাকৃত করের সাথে ৬.২৫ হারে সুদ যোগ হবে এবং যতবছরের কর বাকী থাকবে ততগুন সুদ বেশী হবে এবং মূল করের সাথে যুক্ত হবে ৷

Caption: land tax rate 2015

জমির ধরন ও ব্যবহার ভেদে ভূমি কর । বর্তমানে প্রচলিত ভূমি উন্নয়ন করের হার

  1. কৃষি জমির ক্ষেত্রে- ২৫বিঘা পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফ। ২৫ বিঘার অধিক হতে ১০ একর পর্যন্তজমির জন্য প্রতি শতাংশ জমির জন্য ৫০ পয়সা। ১০ একরের উর্দ্ধে হলে প্রতিশতাংশ ১ টাকা।
  2. চা/রাবার/ফল/ফুলের বাগানের ক্ষেত্রে- চাবাগান, রাবার বাগান,আমবাগান অথবা ১ একরের উধ্বে কোনো জমিতে ফলের বাগানকিংবা ফুলের বাগান থাকলে জমির ক্ষেত্রে প্রতি শতাংশ জমির জন্য ১ টাকা ১০পয়সা।
  3. পল্লী এলাকার আবাসিক জমির ক্ষেত্রে- ১৯৯০সালের ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েলের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পল্লী এলাকারবসবাসকারী কৃষি পরিবারের চাষের জমি এবং বসত বাড়ী কৃষি জমি হিসাবে গন্য করেকৃষি হারে ভূমি উন্নয়ন কর ধার্য হবে। তবে পল্লী এলাকার পাকা ভিটির বাড়ীরজন্য শতক প্রতি ৫ টাকা হারে কর দিতে হবে।
  4. অকৃষি জমির ক্ষেত্রে- কৃষিজমি বাদে অন্যান্য সকল জমিই অকৃষি কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সংরক্ষিতরাখলে তা অকৃষি জমি বলে গণ্য হবে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, বাজারের সকল জমিঅকৃষি জমি। তাতে কৃষি কাজ করা হলেও। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, গাজীপুর ওনারায়নগঞ্জ মহানগরীর মত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার আবাসিক জমির কর শতক প্রতি ২২টাকা, বাণিজ্যিক ১২৫ টাকা এবং জেলা সদরের আবাসিক জমির কর শতক প্রতি ৭ টাকা, বাণিজ্যিক ২২ টাকা এবং অন্যান্য সকল পৌর এলাকার আবাসিক জমির জন্য কর শতকপ্রতি ৬ টাকা বাণিজ্যিক হার ১৭ টাকা। পৌরসভা ঘোষিত হয়নি এরূপ এলাকার আবাসিকপাকা ভিটি হার ৫ টাকা, বাণিজ্যিক ১৫ টাকা।
  5. শিল্প বা বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে- শিল্পও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ভূমির জন্য যে পরিমাণ জায়গা শিল্প/বাণিজ্যিককাজে ব্যবহৃত হয় তার কর বাণিজ্যিক হারে হবে। আর যে পরিমাণ জমি আবাসিক কাজেব্যবহৃত হবে তার খাজনা আবাসিক হারে হবে। বাংলা ১৪০২ সন থেকে অব্যবহৃত বাপতিত জমির কর কৃষি হারে (১ টাকা প্রতি শতাংশ) হবে। তার আগের কর বাণিজ্যিকহারে হবে।
  6. ডেইরী ফার্ম/পোলট্রি পোলট্রি ফার্মের ক্ষেত্রে- কৃষিজমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গবাদি পশু পালন ও হাঁস মুরগি এর খামার স্থাপনকরা হলে সেই জমির পরিমাণ যাই হোক বাণিজ্যিক হারে কর হবে। শহর, উপশহর, পৌরসভা ও উপজেলা সদরে অবস্থিত বসতবাড়ী সংলগ্ন অকৃষি জমিতে ডিম, দুধ ও মাংসউৎপাদনের লক্ষ্যে স্থাপিত খামারে দুগ্ধবতী গাভীর সংখ্যা অনধিক ১৫ টি হলেএবং হাঁস মুরগীর সংখ্যা অনধিক ৫০০ টি হলে উক্ত খামারের ভূমিকর আবাসিক হারেহবে। সরকারী/আধা সরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা কর্তৃক গবেষণামূলক কাজেরঅংশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত খামারের জমির খাজনা আবাসিক হারে আদায় করতে হবে৷যেকোন খামারে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে দুধ ও মাংস প্রক্রিয়াজাত করে বিপনন বাবিক্রির ব্যবস্থা করলে ভূমিকর বাণিজ্যিক হারে হবে। উল্লেখ্য যে এসব খামারেরগোচারণ ভূমি বা হাঁস মুরগির খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত জমির কর আবাসিক হারেহবে ৷এছাড়া খেলার মাঠ, স্টেডিয়াম, সুইমিং পুল,শরীর চর্চা কেন্দ্র এবংসরকারী সকল ক্রীড়া চত্বরের কর আবাসিক হারে হবে।
  7. হস্তচালিত তাঁত ঘরের ক্ষেত্রে- কোনোতাঁত ঘর তাতীর নিজস্ব বসতবাড়ীর অভ্যন্তরে বা গৃহসংলগ্ন হলে এবং তাঁতেরসংখ্যা সর্বাধিক ৫টি হলে এবং তাঁতগুলি সম্পূর্ণ হস্তচালিত ও তাঁতীর নিজস্ববা পরিবার ভুক্ত সদস্যের শ্রমে চালিত হয়ে থাকলে হস্তচালিত তাঁত শিল্প যেজমির উপর অবস্থিত উক্ত জমির কর আবাসিক হারে হবে। মজুরীর ভিত্তিতে বাইরেরলোক নিয়োগ করলে অথবা শক্তিচালিত তাঁত ব্যবহার করলে বা তাঁতীর বসত বাড়ীর অংশবিশেষে বাণিজ্যিক কার্যক্রম থাকলে ঐ জমির জন্য ভূমি উন্নয়ন কর বাণিজ্যিকহারে দিতে হবে।

কত বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ?

কৃষি জমির ক্ষেত্রে ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনা মওকুফ করে দেয়া হয়েছে। ২৫ বিঘার অধিক থেকে ১০ একর পর্যন্ত জমির প্রতি শতাংশ জমির জন্য ৫০ পয়সা করে। ১০ একরের বেশি হলে প্রতি শতাংশ জমির জন্য ১ টাকা হারে খাজনা দিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকার আবাসিক জমির খাজনা কিছুটা ভিন্নরকম। ২৫ বিঘার নিচে কৃষি জমি খাজনা মওকুফ বাবদ ১০ টাকার দাখিলা বুঝে নিন। আপনার জমির খাজনা আপনি দিচ্ছেন,তাই খাজনার পরিমাণ তথা দাখিলায় বর্ণিত টাকার বেশী ১ টি টাকাও দিবেন না।এটা আপনার নিজের জমির খাজনা,বাজারের বিক্রেতার কোন পণ্য না যে মনমতো দাম না পেলে তিনি দিবেন না। নির্ধারিত হারে দাখিলা মতে খাজনা তহশিলদার না নিতে চাইলে এসি (ল্যান্ড) এর নিকট অভিযোগ দিন।

খাজনার উপর সুদের হিসাব কিভাবে করে?

একজনকৃষি জমির মালিককে প্রতি বছরে ১০০ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হলে আর তাবাংলা ১৪১৬ সন হতে বাংলা ১৪২১ পর্যন্ত ৬ বছর যাবত বকেয়া থাকলে তাকে বর্তমানে কত টাকা খাজনা পরিশোধ করতে হবে? এখানে ৬ বছরের মধ্যে শেষ বছরটিকেতথা ১৪২১ সালকে হাল সন ধরে পূর্বের ৫ বছরের করের সাথে জ্যামিতিক হারে সুদদিতে হবে। সুতরাং ১০০ x ৬ = ৬০০ টাকা। ১৪২০ সাল বা ৫ম বছরের জন্য সুদ হবে = (১০০ x ৬.২৫% x ১) = ৬.২৫ টাকা। ১৪১৯ সাল বা ৪র্থ বছরের জন্য সুদ হবে = (১০০ x ৬.২৫% x ২) = ১২.৫০ টাকা। ১৪১৮ সাল বা ৩য় বছরের জন্য সুদ হবে = (১০০ x ৬.২৫% x ৩) = ১৮.৭৫ টাকা।১৪১৭ সাল বা ২য় বছরের জন্য সুদ হবে = (১০০ x ৬.২৫% x ৪) = ২৫ টাকা। ১৪১৬ সাল বা ১ম বছরের জন্য সুদ হবে = (১০০ x ৬.২৫% x ৫) = ৩১.২৫ টাকা। সুতরাং ৬ বছরের জন্য মোট (৬০০+৬.২৫+১২.৫০+১৮.৭৫+২৫+৩১.২৫)= ৬৯৩.৭৫ টাকা বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে হবে।

খাজনা রেট ২০২৩ । সরকারি খাজনার হারের তালিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *