স্বল্প আয়ের লোকজন তো বটেই ধনীরাও খোঁজেন কিভাবে কম আয়কর দেয়া যায়। আয়কর রেয়াত বা আয়কর ছাড় সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণেই অনেককেই বেশি আয়কর দিতে হচ্ছে। কিছু কিছু খাতে বিনিয়োগ ও দান করলে আয়কর ছাড় বা আয়কর রেয়াত পাওয়া যায়। এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণেই অনেককে বেশি আয়কর দিতে হচ্ছে। সরকার ঘোষিত সঠিক খাতে বিনিয়োগ করলে এবং অন্য কোনো আয় না থাকলেও বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে অগ্রিম Source Tax কর্তনের টাকা দিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া সম্ভব।
আসুন জানি আয়কর রেয়াতের খাত সমূহ কি কি এবং কিভাবে আয়কর রেয়াত পাওয়া যায়।
সূচীপত্র
কিভাবে আয়কর রেয়াত পাবেন
আয়কর রেয়াত পাওয়ার জন্য যেকোন খাতে দান বা বিনিয়োগ করলে হবে না। রেয়াত পেতে একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই সরকার অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগ করতে হবে অথবা নির্ধারিত দান খাতে দান করতে হবে। এসব খাতে আপনার মোট আয়ের সর্বোচ্চ ২০% শতাংশ পর্যন্ত (গত বছর ২৫% ছিলো চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে তা কমানো হয়েছে) বিনিয়োগের জন্য আয়কর রেয়াত পাবেন। এর অতিরিক্ত কোন বিনিয়োগ করলেও তার জন্য আপনি কোন আয়কর রেয়াত পাবেন না।
আয়কর রেয়াতের খাত সমূহ
আয়কর রেয়াত পাওয়ার জন্য নিম্মোক্ত মোট ২২ টি বিনিয়োগ খাত ও দান খাতে বিনিয়োগ/ দান করলে
সংশ্লিষ্ট বছরে আয়কর রেয়াত পাবেন।
- আয়কর রেয়াতের জন্য অনুমোদিত বিনিয়োগ খাতসমূহ
- জীবন বিমার প্রিমিয়াম
- সরকারি কর্মকর্তার প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা
- স্বীকৃত ভবিষ্যৎ তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তার চাঁদা
- কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বিমা তহবিলে চাঁদা
- সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ডে প্রদত্ত চাঁদা
- যেকোনো তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট পেনশন স্কিমে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ
- সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে বিনিয়োগ
- বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ
- বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ।
অনুমোদিত দানের খাত
- জাতির জনকের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে অনুদান
- যাকাত তহবিলে দান
- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত কোন দাতব্য হাসপাতালে দান
- প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানে দান
- মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে প্রদত্ত দান
- আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কে দান
- আহসানিয়া ক্যান্সার হাসপাতালে দান
- আইসিডিডিআরবিতে প্রদত্ত দান
- সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপি-এ প্রদত্ত দান
- সরকার কর্তৃক অনুমোদিত জনকল্যাণমূলক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দান
- এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশ-এ দান
- ঢাকা আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালে দান
- মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের কোন প্রতিষ্ঠানে অনুদান।
কর রেয়াতের হার
- মোট বার্ষিক আয় ১৫ লক্ষ টাকার কম হলে কর রেয়াতের হার হবে ১৫%।
- মোট বার্ষিক আয় ১৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে কর রেয়াতের হার হবে ১০%।
সরকার অনুমোদিত DPS এ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে কর রেয়াত পাওয়া যায়, এর বেশি হলে অতিরিক্ত অংশের জন্য কর রেয়াত পাওয়া যায় না। DPS থেকে আয়কর রেয়াত পাওয়ার জন্য, আয় বছরের মধ্যে যে বিনিয়োগ করবেন, শুধু তারাই সেই বছর ওপর উক্ত অংশের জন্য রেয়াত পাবেন।
সঞ্চয়পত্র আয়কর রেয়াত হিসাব করার উদাহরণ
আয়করের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুসারে কর রেয়াতের একটি উদাহরণ দেখানো হল:
ধরুন, আপনি ২০২১- ২০২২ অর্থবছরে (জুলাই থেকে জুন মাস পর্যন্ত) ৮,০০,০০০ টাকা আয় করেছেন অন্মধ্যে সব খরচ করার পর ২,০০,০০০ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। আসুন এবার আপনার আয়কর, কর রেয়াত ও নীট প্রদেয় করের পরিমাণ উক্ত বছরের জন্য বের করা যাক।
আয়করের পরিমাণ
- ১ম ৩,০০,০০০ টাকার উপর ০%, ০ টাকা
- পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকার উপর ৫%, ৫,০০০ টাকা
- পরবর্তী ৩,০০,০০০ টাকার উপর ১০%, ৩০,০০০ টাকা
- পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকার উপর ১৫% যেহেতু আপনার অবশিষ্ট আয় (৮ লক্ষ – ৩ লক্ষ – ১ লক্ষ – ৩ লক্ষ) = ১ লক্ষ টাকা সুতরাং ১,০০,০০০ টাকার ১৫%, ১৫,০০০ টাকা
কর রেয়াতের পরিমাণ
যেহেতু, ১৫ লাখ টাকার কম বার্ষিক আয় হলে ১৫% পর্যন্ত কর ছাড় পাওয়া যায়। সেই অনুসারে আপনার বিনিয়োগকৃত ২,০০,০০০ টাকার উপর ১৫% হারে কর রেয়াত পাবেন যার পরিমাণ হচ্ছে মোট ৩০,০০০ টাকা।
নীট প্রদেয় করের পরিমাণ
উপরের তথ্য ও হিসাব অনুযায়ী আপনার মোট আয়করের পরিমাণ (৫০,০০০ টাকা – ৩০,০০০ টাকা) = নীট প্রদেয় কর ২০,০০০ টাকা