আজকের খবর ২০২৫

বালাম বই অনলাইনে উন্মুক্তকরণ ২০২৫ । জমি প্রতারণা বন্ধ হোক তথ্যের অস্বচ্ছতা ও দলিল গোপন রাখার খেলা বন্ধের দাবি

বাংলাদেশে জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের যে সমস্যাটি শিকড় গেঁড়ে আছে, তা হলো তথ্যের অস্বচ্ছতা এবং জমির দলিলের আসল ইতিহাস ‘বালাম বই’ গোপন রাখার প্রবণতা। দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় যেখানে খতিয়ান, নামজারি, ভূমি কর প্রদান ইত্যাদি বিষয়গুলো ইতোমধ্যে অনলাইনে সহজলভ্য হয়েছে, সেখানে জমির দলিলের মূল ও ঐতিহাসিক রেকর্ড – বালাম বই – কেন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে না, এই প্রশ্ন এখন জোরালো হয়ে উঠেছে।

বালাম বই হলো সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষিত সেই মহামূল্যবান রেকর্ড, যেখানে প্রতিটি রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের মূল বিবরণ ও ধারাবাহিক ইতিহাস যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ থাকে। এটি মূলত জমির মালিকানা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত দলিল হিসেবে গণ্য হতে পারে। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকায় সৃষ্টি হচ্ছে এক জটিল জালিয়াতচক্র।

প্রতারণার আঁতুড়ঘর: বালাম বইয়ের গোপনীয়তা

বর্তমানে জমির দলিলের ইতিহাস বালাম বই থেকে যাচাই করতে সাধারণ মানুষকে অফিসগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুরতে হয়, দালালদের শরণাপন্ন হতে হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে ঘুষ দিতে বাধ্য হতে হয়। তথ্যের এই গোপনীয়তাকে কাজে লাগিয়ে একটি অসাধু চক্র জাল দলিল তৈরি করে বা একই জমি একাধিকবার বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার প্রতারণা করে চলেছে। প্রতারণা ও জালিয়াতির শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। প্রবাসীরাও জমির তথ্য যাচাই করতে না পারায় প্রতারকদের সহজ শিকারে পরিণত হচ্ছেন।

সময়ের দাবি: বালাম বইয়ের অনলাইন উন্মুক্তকরণ

ভূমি ব্যবস্থাপনাকে দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ করার জন্য এখন বালাম বইকে অনলাইনে উন্মুক্ত করার দাবি উঠেছে। দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ, ভূমি-অধিকার কর্মী এবং ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ মনে করছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের এই যুগে এটি অত্যন্ত জরুরি পদক্ষেপ।

বালাম বই অনলাইনে উন্মুক্ত হলে যে পরিবর্তনগুলো আসবে:

  • জমি কেনা-বেচায় স্বচ্ছতা: একজন ক্রেতা ঘরে বসেই প্রস্তাবিত জমির দলিলের সম্পূর্ণ ইতিহাস যাচাই করতে পারবেন।
  • প্রতারণা ও জালিয়াতি হ্রাস: জমির পূর্ববর্তী মালিকানা ও হস্তান্তরের তথ্য প্রকাশ্যে এলে জাল দলিল তৈরি বা প্রতারণার সুযোগ কমে যাবে।
  • সহজ যাচাই: জনগণ খুব সহজে ও দ্রুত নিজেদের জমির তথ্য যাচাই করতে পারবেন।
  • দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধ: অফিসগুলোতে দালালদের দৌরাত্ম্য ও ঘুষের লেনদেন বহুলাংশে বন্ধ হবে।
  • প্রবাসীদের সুবিধা: বিদেশে থাকা প্রবাসীরাও নিজের জমির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন।

যখন সরকার খতিয়ান, নামজারি ও ভূমি উন্নয়ন করের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমি সংক্রান্ত সেবাগুলো অনলাইনে এনেছে, তখন বালাম বইয়ের মতো আরও মৌলিক তথ্যকে অনলাইনে না আনার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। এটি শুধু জনগণের দাবি নয়, ন্যায়বিচার এবং নিরাপদ ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য এখন সময়ের জোরালো প্রয়োজন।

এই প্রেক্ষাপটে, সাধারণ মানুষের কণ্ঠে এখন একটাই স্লোগান: “বালাম বই অনলাইনে উন্মুক্ত করো, জমি প্রতারণা বন্ধ করো।” এই দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন হলে দেশে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে এবং ভূমি ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশা করা যায়।

জমির বালাম বই কি?

জমির বালাম বই হলো ভূমি সংক্রান্ত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক রেকর্ড বই, যা প্রতিটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষণ করা হয়। সহজ কথায়, এটি হলো রেজিস্ট্রি হওয়া জমির দলিলের আসল ইতিহাস বা হুবহু নকল (কপি) সংরক্ষণের বই

বালাম বই সম্পর্কে বিস্তারিত:

১. রেকর্ড সংরক্ষণের উদ্দেশ্য: যখন কোনো জমি কেনা-বেচা হয় বা অন্য কোনো উপায়ে হস্তান্তর হয় এবং দলিলটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করা হয়, তখন সেই দলিলের সম্পূর্ণ বিবরণ হাতে লিখে বা টাইপ করে এই বালাম বইয়ে তুলে রাখা হয়। এটি একটি স্থায়ী রেকর্ড হিসেবে কাজ করে।

২. গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: বালাম বইয়ে মূলত রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের সম্পূর্ণ নকল সংরক্ষণ করা হয়। এতে সাধারণত নিম্নোক্ত তথ্যগুলো থাকে: * দলিলের ক্রমিক বা রেজিস্ট্রি নম্বর। * দলিলের প্রকৃতি (যেমন: সাফ কবলা, হেবা, দান ইত্যাদি)। * দাতা (বিক্রেতা) ও গ্রহীতার (ক্রেতা) নাম ও ঠিকানা। * বিক্রিত জমির পরিমাণ ও দাগ/খতিয়ান নম্বর। * বিক্রয় মূল্য (বালাম মূল্য)। * রেজিস্ট্রির তারিখ।

৩. প্রয়োজনীয়তা: এটি জমির মালিকানা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মূল দলিল হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে, বালাম বইয়ে সংরক্ষিত তথ্য থেকে দলিলের সত্যায়িত নকল (সার্টিফায়েড কপি) সংগ্রহ করা যায়। জমি সংক্রান্ত যেকোনো জটিলতা বা প্রতারণার ক্ষেত্রে বালাম বইয়ের তথ্য অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।

৪. সংরক্ষণ: বালাম বইগুলো সাধারণত সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে খুব সতর্কতার সাথে সংরক্ষণ করা হয়। এগুলি বছরের পর বছর ধরে একটি নির্দিষ্ট জমির হস্তান্তরের ইতিহাসকে ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখে।

সংক্ষেপে, বালাম বই হলো এমন একটি আর্কাইভ, যেখানে জমির দলিলের একটি অনুলিপি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হয়, যাতে ভবিষ্যতে যেকোনো প্রয়োজনে সেই তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *