জোরপূর্বক দখলে শাস্তি কি? – বৈধ কাগজপত্র না থাকার পরেও কেউ যদি ব্যক্তি মালিকানাধীন, সরকারি খাস ভূমি বা কোন সংস্থার জমি জোর করে দখল করে রাখেন, সেজন্য এক বছর থেকে তিন বছরের কারাদণ্ড, এক লক্ষ থেকে তিন লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। বর্তমান আইন ২০২৩ অনুসারে ৭ বছরের জেল ও আর্থিক জরিমানা হতে পারে।

জোরপূর্বক আপনার জমি থেকে উচ্ছেদ করে অবৈধভাবে সেখানে অন্য কেউ তার সত্ত্ব প্রতিষ্ঠার অবস্থাকে বেদখল বলে। মনে রাখবেন, আপনার জমি বেদখল হলে যত দ্রুত সম্ভব এ থেকে প্রতিকারে ব্যবস্থা নিতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময়, তথা ১২ বছরের বেশি সময় সম্পত্তি বেদখল থাকলে এবং এর মধ্যে মামলা না করলে তামাদি আইন অনুযায়ী উক্ত সম্পত্তির উপর বেদখলকারীর এক ধরণের স্বত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়।

তামাদি আইন হল সেই আইন যার মাধ্যমে কোন মামলা বা অন্য কোন বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সময়ের নিয়ম মানতে হয় সেই নিয়ম সমৃদ্ধ আইন। এই আইনে বলা আছে কখন মামলা করতে হবে, কত দিনের মধ্যে, সময় গণনার পদ্ধতি ব্যতিক্রম কিছু বিষয় ইত্যাদি।

বেদখল হতে দুইভাবে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে – সালিশের মাধ্যমে ও মামলার মাধ্যমে। ১) সালিশের মাধ্যমে: উভয় পক্ষের সম্মতিতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, গ্রাম আদালত, মুরুব্বী কিংবা মাতব্বর এর নেতৃত্বে সালিশের মাধ্যমে বাদী তার জমি ফেরত পেতে পারেন । সালিশে মীমাংসার মাধ্যমে উভয় পক্ষের মধ্যে সমাধান করা হয়ে থাকে । ২) মামলার মাধ্যমে: (২-ক) ফৌজদারি আদালতে মামলা: জমি দখলকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারেন। এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হবে প্রথম শ্রেণীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। আর এ মামলা করতে হবে বেদখল হয়ে গেলে কিংবা বেদখল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে। কোনও মামলা করলে ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিপক্ষের ওপর সমন জারি করবেন। পরবর্তী সময়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবেন এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে সম্পত্তির দখলদার কে তা নির্ধারণ করবেন। প্রয়োজনে সরেজমিনে তদন্তের আদেশ দিতে পারেন পুলিশকে। তাদের দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রকৃত দখলদার কে, সে বিষয়ে রায় দেবেন। তবে ১৪৫ ধারায় প্রতিকার চাইতে গেলে এখানে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করা যাবে না। এর মাধ্যমে শুধু প্রকৃত দখলদার নির্ণয় করার জন্য প্রতিকার চাওয়া যাবে।

(২-খ) দেওয়ানী আদালতে মামলা: সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ এবং ৮ ও ৪২ ধারায় জমিজমার মালিকানা নিয়ে প্রতিকারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এখতিয়ারাধীন আদালতে মামলা করতে হবে। মামলার মূল্যমান চার লাখ টাকার কম হলে সহকারী জজ আদালতে এবং চার লাখের বেশি হলে অসীম এখতিয়ার পর্যন্ত যুগ্ম জেলা জজ আদালতে প্রতিকার চাইতে হবে। মামলা দায়ের করতে হবে আইনজীবীর মাধ্যমে।

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হলে মালিকানা প্রমাণের দরকার নেই। শুধু জমি থেকে দখলচ্যুত হয়েছেন—এটি প্রমাণ করলেই চলবে। ৯ ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনও ব্যক্তি বেদখল হন, তবে তিনি বা তাঁর মাধ্যমে দাবিদার কোনও ব্যক্তি মোকদ্দমার মাধ্যমে এর দখল পুনরুদ্ধার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যেসব দিক বিবেচনা করা হয়, সেগুলো হলো—বাদী অর্থাৎ যিনি প্রতিকার দাবি করেছেন, তিনি জমিটি দখল করে আসছিলেন কি না; বিবাদী তাঁকে জোরপূর্বক বেদখল করেছেন কি না; বিবাদী বেআইনিভাবে জমিতে প্রবেশ করেছেন কি না। তবে বাদীকে অবশ্যই বেদখল হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। অন্যথায় এ ধারায় মামলা করার অধিকার হারাতে হবে তাঁকে।

বাদী যদি সম্পত্তিতে নিজের স্বত্ব (মালিকানা) প্রমাণে সমর্থ নাও হন কেবল বেদখল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দখলে থাকা প্রমাণ করতে পারেন তবে তিনি তার পক্ষে ডিক্রী পেতে পারেন। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারা মতে প্রদত্ত ডিক্রী বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বা রিভিউ করার কোন বিধান নেই । তবে মহামান্য হাইকোর্টে রিভিশন করা যাবে। কিন্তু সরকার কর্তৃক বেদখল হলে এ আইনে কোন প্রতিকার পাওয়া যাবে না।

ভূমি বেদখলে হতে কত দিনের মধ্যে মামলা করতে হবে / ১২ বছর পর বেদখলকারীর অধিকার জন্মে বটে

মালিকানা ফিরে পেতে উপযুক্ত প্রমানক এবং উপযুক্ত সময়ে মামলা দায়ের বা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

জমি দখলের শাস্তি ২০২২ । সম্পত্তি বেদখল হলে আপনি কি করবেন?

সূত্র: ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ (THE CODE OF CRIMINAL PROCEDURE, 1898) – http://bdlaws.minlaw.gov.bd/pdf_part.php?id=75 । সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন- ১৮৭৭ (THE SPECIFIC RELIEF ACT, 1877) – http://bdlaws.minlaw.gov.bd/pdf_part.php?id=36। তামাদি আইন – ১৯০৮ (THE LIMITATION ACT, 1908) – http://bdlaws.minlaw.gov.bd/pdf_part.php?id=88

বেদখল হতে প্রতিকার পেতে  হলে যে প্রমাণ করতে হবে

  1. আপনাকে জোরপূর্বক বেদখল করা হয়েছে।
  2. আপনাকে আপনার সম্মতি ছাড়া বেদখল করা হয়েছে।
  3. যথাযথ আইনগত পদ্ধতি ছাড়া বেদখল করা হয়েছে।
  4. বেদখল হবার পূর্বে জমির ন্যায্য দখল আপনার হাতে ছিল।
  5. আপনি বেদখল হবার ৬ মাসের মধ্যে প্রতিকার চেয়ে মামলা দায়ের করেছেন।

বেদখল হলে কোন বিষয়টি মনে রাখা জরুরি?

আপনার জমি বেদখল হলে যতদ্রুত সম্ভব এর প্রতিকারে ব্যবস্থা নিতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময় সম্পত্তি বেদখল থাকলে উক্ত সম্পত্তির উপর বেদখলকারীর এক ধরণের স্বত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়। তামাদি আইনের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, যে কোনও সম্পত্তির দখল প্রাপ্তির জন্য মামলা করার ব্যাপারে এ আইনে যে মেয়াদ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, তা উত্তীর্ণ হওয়ার পর সেই সম্পত্তিতে বাদীর অধিকার বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তামাদি আইনের ১৪২ ধারায় বলা হয়েছে যে বেদখল হওয়ার ১২ বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। তামাদি আইনের ২৮ ও ১৪২ ধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কোনও ব্যক্তি তার মালিকানা ও দখলে থাকা সম্পত্তি বেদখল হওয়ার ১২ বছরের মধ্যে মামলা না করলে ওই সম্পত্তিতে তার স্বত্ব বিলুপ্ত হয়ে যায়।

ভূমি আইন ২০২৩ এর গেজেট pdf । নতুন ভূমি আইনের সারসংক্ষেপ দেখে নিন