২০২৫ সালে ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কিছু নতুন আইন ও বিধান কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এবং ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩-এর বাস্তবায়ন। এই আইনগুলো জমি সংক্রান্ত জালিয়াতি, প্রতারণা এবং দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
২০২৫ সালে ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কিছু নতুন আইন ও বিধিমালা কার্যকর হয়েছে এবং বেশ কিছু যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা হয়েছে। এসব আইন ও বিধিমালা জমি সংক্রান্ত প্রতারণা, জালিয়াতি এবং বিরোধ নিষ্পত্তিতে স্বচ্ছতা ও গতি আনার লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে।
২০২৫ সালের মূল নতুন আইন ও পরিবর্তনসমূহ:
১. ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৪:
এই আইনটি মূলত ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ দমনের জন্য তৈরি হয়েছে। যদিও আইনটি ২০২৩ সালে প্রণীত, এর বাস্তবায়ন এবং বিধিমালা (২০২৪) এর কার্যকরতা মূলত ২০২৫ সাল থেকে জোরদার হয়েছে। এই আইনে নির্দিষ্ট কিছু অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, যেমন:
- ৭ বছরের কারাদণ্ড: অন্যের জমিকে নিজের বলে প্রচার, তথ্য গোপন করে জমি বিক্রি, জাল দলিল তৈরি করে জমি দখল করা, এক ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তি পরিচয়ে দলিল করা, অথবা মিথ্যা বিবরণসহ দলিলে স্বাক্ষর করলে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
- জবরদখল ও প্রতারণা দমন: এই আইনের ফলে জবরদখলকৃত জমি, জাল দলিলের জমি, মৃত ব্যক্তির জমি বণ্টন না করে এওয়াজ বদল দলিল করা জমি এবং সরকারি খাস জমি প্রকৃত মালিকদের কাছে ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে।
২. ভূমি আপীল বোর্ড বিধিমালা, ২০২৫:
এই নতুন বিধিমালা ভূমি আপীল বোর্ডের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও গতি বাড়ানোর জন্য প্রণীত হয়েছে। এর মাধ্যমে ভূমি রাজস্ব, নামজারি, জমাখারিজ, সায়রাত, খাসজমি বন্দোবস্ত এবং অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্ত আপীল ও রিভিশন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।
৩. ভূমি উন্নয়ন কর আইন, ২০২৩ (সংশোধিত):
এই আইন অনুযায়ী, কৃষিজমির ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে, কৃষিজমির ক্ষেত্রে ২৫ বিঘা পর্যন্ত কোনো খাজনা দিতে হয় না। তবে এর বেশি হলে ভূমি উন্নয়ন করের হার পরিবর্তিত হয়েছে।
৪. ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা:
সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণ অটোমেশনে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর অংশ হিসেবে:
- ডিজিটাল নামজারি (মিউটেশন): নতুন পদ্ধতিতে নামজারি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন অনলাইনে আবেদন, কোর্ট ফি প্রদান এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
- অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর: ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক করা হয়েছে, যা ভোগান্তি কমিয়েছে।
- ভূমির রেকর্ড ডিজিটালাইজেশন: ৩ কোটির বেশি জমির তথ্য ইতোমধ্যে ডিজিটাল ফরম্যাটে আনা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে ভূমি সংক্রান্ত রেকর্ড যাচাই সহজ করবে।
এই আইনগুলো মূলত ভূমি সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা এবং মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য প্রণীত হয়েছে। বিশেষ করে, ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ এর কারণে জমি সংক্রান্ত প্রতারণা ও জালিয়াতি অনেকাংশে কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আপনি ভূমি আইন সম্পর্কে জানতে চাইলে কিছু বই পড়তে পারেন। নিচে কিছু জনপ্রিয় এবং প্রাসঙ্গিক বইয়ের একটি তালিকা দেওয়া হলো।