২০২৫ সালে ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কিছু নতুন আইন ও বিধান কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এবং ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩-এর বাস্তবায়ন। এই আইনগুলো জমি সংক্রান্ত জালিয়াতি, প্রতারণা এবং দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সরাসরি “ভূমি আইন ২০২৫” নামে কোনো একক ও পূর্ণাঙ্গ নতুন আইন এখনো চূড়ান্তভাবে প্রণীত হয়নি, তবে সাম্প্রতিক সময়ে জমি-জমা সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আইন ও বিধিমালা কার্যকর হয়েছে বা হওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো:
১. ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩
এটিই বর্তমানে জমি-জমা সংক্রান্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নতুন আইন। এটি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে পাস হয়েছে এবং এর অধীনে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিধিমালা, ২০২৪ জারি হয়েছে। এই আইনটির মূল লক্ষ্য:
- ভূমি সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি: জাল দলিল তৈরি, প্রতারণামূলকভাবে ভূমির দখল নেওয়া, সরকারি জমি দখল করা বা সীমানা পরিবর্তন করা—এসব অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির (জেল ও জরিমানা) বিধান রাখা হয়েছে।
- “দলিল যার, জমি তার” নীতি: এই আইনের মাধ্যমে কার্যত জমির বৈধ মালিকানা ও দখল নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
- দ্রুত প্রতিকার: বিধিমালা কার্যকর হওয়ার ফলে, অবৈধভাবে দখলচ্যুত ব্যক্তিরা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করে দ্রুত (কিছু ক্ষেত্রে তিন মাসের মধ্যে) জমির দখল ফিরে পাওয়ার সুযোগ পাবেন।
- গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব: এই আইন কার্যকর হওয়ায় অনেকে বিশ্বাস করেন যে ২০২৫ সালের মধ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে বেদখল হওয়া জমি প্রকৃত মালিকেরা ফিরে পেতে শুরু করবেন।
২. ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন (খসড়া)
ভূমি মন্ত্রণালয় “ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন, ২০২৪” (বা খসড়া অধ্যাদেশ আকারে “ভূমি ব্যবহার ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫” নামে পরিচিত) নিয়ে কাজ করছে। এই আইনের মূল উদ্দেশ্য:
- কৃষি জমি সুরক্ষা: অপরিকল্পিতভাবে কৃষি জমি, বনভূমি, পাহাড় ও জলাশয় নষ্ট করে নগরায়ন, আবাসন বা শিল্প-কারখানা স্থাপন বন্ধ করা।
- ভূমি জোনিং: ভূমির প্রকৃতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট এলাকার ব্যবহার (কৃষি, শিল্প, আবাসিক) সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা এবং তা লঙ্ঘন করলে শাস্তির ব্যবস্থা রাখা।
৩. ভূমি ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশন সম্পর্কিত উদ্যোগ
আইন ছাড়াও ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও গতি আনতে সরকার ২০২৫ সালকে লক্ষ্য করে একাধিক ডিজিটাল উদ্যোগ নিয়েছে:
- অনলাইন মিউটেশন ও খাজনা: ঘরে বসে অনলাইনে জমির নামজারি (মিউটেশন) এবং ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধের ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে।
- জাতীয় ভূমি তথ্য ব্যাংক: প্রতিটি জমির জন্য ইউনিক আইডি তৈরি এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে মালিকানা ও লেনদেনের ইতিহাস সংরক্ষণ করে জালিয়াতি রোধ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সংক্ষেপে বলা যায়, ২০২৩ সালের ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ হলো বর্তমানে কার্যকর হওয়া সবচেয়ে বড় পরিবর্তন, যা জমি-জমা সংক্রান্ত জালিয়াতি ও জবরদখল প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
আপনি ভূমি আইন সম্পর্কে জানতে চাইলে কিছু বই পড়তে পারেন। নিচে কিছু জনপ্রিয় এবং প্রাসঙ্গিক বইয়ের একটি তালিকা দেওয়া হলো।
