আজকের খবর ২০২৫

সরকারি করমুক্ত ভাতার সম্পূর্ণ তালিকা ২০২৫ । শুধুমাত্র মূল বেতন ও উৎসব ভাতা করযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য?

সূচীপত্র

করযোগ্য আয় হলো সেই পরিমাণ টাকা, যার ওপর একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সরকার নির্ধারিত হারে আয়কর দিতে হয়। বাংলাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) এই করের হার এবং নিয়মাবলী নির্ধারণ করে থাকে।আপনার মোট আয় থেকে কিছু নির্দিষ্ট খরচ এবং ছাড় বাদ দেওয়ার পর যে পরিমাণ অবশিষ্ট থাকে, সেটাই হলো আপনার করযোগ্য আয়। এই খরচ বা ছাড়গুলো সাধারণত NBR দ্বারা অনুমোদিত হয় – সরকারি করমুক্ত ভাতার সম্পূর্ণ তালিকা ২০২৫

করযোগ্য আয় গণনার কিছু কি কি আসে? মোট আয় নির্ধারণ প্রথমে আপনার সকল উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়কে একত্রিত করতে হবে। এর মধ্যে বেতন, বাড়ি ভাড়া, ব্যবসা থেকে লাভ, ব্যাংক সুদ, লভ্যাংশ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। আয় থেকে করমুক্ত আয় বাদ দেওয়া সরকার কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়ের ওপর কর ছাড় দিয়ে থাকে। যেমন, একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত উপার্জিত আয়, পেনশন, সরকারি বন্ডের সুদ ইত্যাদি। এই করমুক্ত আয় বাদ দিতে হবে। বিনিয়োগ এবং ছাড়ের সুবিধা কিছু নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগ করলে বা খরচ করলে তার ওপর কর ছাড় পাওয়া যায়। যেমন:

  • জীবন বীমার প্রিমিয়াম
  • ডিপিএস (DPS) এ নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ
  • সরকারি অনুমোদিত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ
  • শেয়ারবাজারে নির্দিষ্ট বিনিয়োগ
  • চিকিৎসা খরচ বা দান ইত্যাদি।

এই ধরনের বিনিয়োগ বা খরচ আপনার মোট আয় থেকে বাদ যাবে। উপরে উল্লেখিত ধাপগুলো অনুসরণ করার পর যে পরিমাণ টাকা অবশিষ্ট থাকে, সেটাই আপনার করযোগ্য আয়। এরপর এই করযোগ্য আয়ের ওপর সরকার নির্ধারিত হারে আপনাকে কর দিতে হবে।

২০২৫-২০২৬ কর বর্ষে সর্বনিম্ন কর কত টাকা দেওয়া বাধ্যতামূলক? ২০২৫-২০২৬ কর বর্ষে সর্বনিম্ন করের পরিমাণ করদাতার অবস্থানভেদে ভিন্ন হবে। করযোগ্য আয় না থাকলে কোন সর্বনিম্ন আয়কর দিতে হবে না। তবে ৩,৫০,০০০ টাকার উপরে আয় হলেই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতার জন্য: ৫,০০০ টাকা। অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতার জন্য: ৪,০০০ টাকা। সিটি কর্পোরেশন ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত করদাতার জন্য: ৩,০০০ টাকা।এই ন্যূনতম করের বিধানটি সেইসব করদাতার জন্য প্রযোজ্য, যাদের করযোগ্য আয় করমুক্ত সীমার উপরে, কিন্তু তাদের প্রদেয় কর বা বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত বিবেচনার পর প্রদেয় করের পরিমাণ উল্লিখিত ন্যূনতম করের চেয়ে কম, শূন্য বা ঋণাত্মক হয়। এই ক্ষেত্রেও তাদের জন্য প্রযোজ্য ন্যূনতম করের পরিমাণ পরিশোধ করতে হবে।

একজন চাকরিজীবীর আয়ের বেশ কিছু অংশ করমুক্ত থাকে। এই করমুক্ত আয়ের তালিকাটি বেশ বিস্তৃত।

সাধারণ করমুক্ত আয়ের সীমা কত? সাধারণ করদাতা: ৩,৫০,০০০ টাকা। মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতা: ৪,০০,০০০ টাকা। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতা: ৪,৭৫,০০০ টাকা। গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতা: ৫,০০,০০০ টাকা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের জন্য: প্রতিটি প্রতিবন্ধী সন্তান/পোষ্যের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০,০০০ টাকা বেশি হবে।

আয়কর নির্দেশিকা (২০২৫-২০২৬) পিডিএফ ডাউনলোড লিংক

সরকারি চাকরি থেকে প্রাপ্ত করমুক্ত ভাতা ২০২৫ । বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা কি করযোগ্য আয়? না।

  1. বাড়ি ভাড়া ভাতা: মূল বেতনের ৫০% অথবা মাসিক ২৫,০০০ টাকা (বার্ষিক ৩,০০,০০০ টাকা), এই দুটির মধ্যে যেটি কম সেই পরিমাণ টাকা করমুক্ত।
  2. চিকিৎসা ভাতা: মূল বেতনের ১০% অথবা বার্ষিক ১,২০,০০০ টাকা, এই দুটির মধ্যে যেটি কম সেই পরিমাণ টাকা করমুক্ত। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সীমা বার্ষিক ১০,০০,০০০ টাকা।
  3. যাতায়াত ভাতা: বার্ষিক ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত সম্পূর্ণ করমুক্ত।
  4. উৎসব ভাতা (যেমন: ঈদ বোনাস, পূজা বোনাস): সম্পূর্ণ করযোগ্য। তবে বাংলা নববর্ষ ভাতা সম্পূর্ণ করমুক্ত।
  5. পেনশন: সরকারি পেনশন তহবিল থেকে প্রাপ্ত পেনশন সম্পূর্ণ করমুক্ত।
  6. আনুতোষিক (Gratuity): সরকারি আনুতোষিক তহবিল থেকে প্রাপ্ত অনধিক ২,৫০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত সম্পূর্ণ করমুক্ত।

সরকারি পেনশন কি করমুক্ত আয়?

হ্যাঁ। বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত নির্দিষ্ট কিছু খাতে বিনিয়োগের জন্য আয়কর রেয়াত পাওয়া যায়, যা কার্যকরভাবে করযোগ্য আয় কমিয়ে আনে। সরকারি পেনশন পেনশনভোগীরা যে পেনশন পান তা সম্পূর্ণ করমুক্ত। প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা ভাতা নির্দিষ্ট কিছু শর্তে শিক্ষা সহায়তা ভাতা করমুক্ত। ক্ষতিপূরণ নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে যেমন চাকরির অবসানে প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণ বা নির্দিষ্ট ভাতা করমুক্ত হতে পারে। এই তালিকাটি আয়কর আইন এবং বাজেট ঘোষণার ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে। যেকোনো করবর্ষের জন্য সঠিক তথ্য জানতে হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) প্রকাশিত সর্বশেষ আয়কর পরিপত্র দেখে নেওয়া জরুরি।

কর রেয়াত পাওয়ার জন্য অনুমোদিত খাতসমূহ- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) কর্তৃক অনুমোদিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাত নিচে উল্লেখ করা হলো:
জীবন বীমার প্রিমিয়াম: আপনার, আপনার স্ত্রী/স্বামী এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের জীবন বীমার জন্য প্রদত্ত প্রিমিয়াম।সঞ্চয়পত্র: সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ।ডিপিএস (DPS): তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডিপোজিট পেনশন স্কিমে (ডিপিএস) মাসিক কিস্তি জমা।
শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ড: বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ।প্রভিডেন্ট ফান্ড: সরকারি কর্মকর্তার প্রভিডেন্ট ফান্ডে বা অনুমোদিত প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা।কল্যাণ তহবিল এবং গোষ্ঠী বীমা তহবিলে চাঁদা: নির্দিষ্ট তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা।
জাকাত তহবিলে দান: অনুমোদিত জাকাত তহবিলে দান।দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান: সরকার অনুমোদিত কোনো দাতব্য হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে দান। 

কর রেয়াত গণনার নিয়ম কি? কর রেয়াত একটি নির্দিষ্ট নিয়মে গণনা করা হয়। এটি সাধারণত মোট বিনিয়োগ এবং কিছু নির্দিষ্ট সীমার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। রেয়াতের পরিমাণ: করদাতার মোট প্রদেয় কর থেকে রেয়াতের পরিমাণ বাদ দেওয়া হয়। বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা: সাধারণত কর রেয়াত পাওয়ার জন্য মোট বিনিয়োগের একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকে। আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ যত বেশি হবে, কর রেয়াতের পরিমাণও তত বেশি হতে পারে, তবে এটি আইনি সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ। সঠিক হিসাবের জন্য সর্বশেষ আয়কর নির্দেশিকা দেখা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *