সূচীপত্র

পেনশন একজন নাগরিকের ভবিষ্যত আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র পেনশন ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে দেশের নাগরিকগণের ভবিষ্যৎ আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। প্রবীণ নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের সরকার বিভিন্ন কৌশল ও পেনশন ব্যবস্থা চালু করেছে–সর্বজনীন পেনশন স্কিম ২০২৪

কেন সর্বজনীন পেনশন চালু হয়েছে? বেশিরভাগ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভশীলতা কমিয়ে দেশজ আয়ের উপর নির্ভরশীল হবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশও উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়ানোসহ সরকারি ব্যয়ে মিতব্যয়িতার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ অর্জনেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়ানো অত্যাবশ্যক। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে সরকারি চাকুরীজীবিদের জন্য নন কন্ট্রিবিউটরী ডিফাইন্ড বেনিফিট পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। তবে দেশের অধিকাংশ জনগোষ্টি একটি টেকসই ও সুসংগঠিত পেনশন কাঠামোর বাইরে থাকায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের আওতায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হয়। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে পেনশন কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করা গেলে দেশের জনগণের সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

শ্রমজীবী মানুষের কথা মাথায় রেখেছে কি? একসময় সামাজিক সুরক্ষা খাতের ব্যয় কমিয়ে আনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। সর্বজনীন পেনশন স্কীমে বর্তমানে ৪ টি স্কিম চালু রয়েছে। এ সকল স্কিমে জনগণ স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করতে পারে। এই ৪টি স্কিমে অংশগ্রহণ বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের অধিকাংশ মানুষকে পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হবে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ এ স্কিমসমূহে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে নানামুখী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট শ্রমজীবীদের প্রায় ৮৫% ভাগ অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত হওয়ায় বিশাল সংখ্যক নাগরিকের ভবিষ্যত আর্থিক নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড এর কারনে কর্মক্ষম জনসংখ্যার পরিমাণ বেশি থাকার সুফল ভোগ করছে।

এমন পেনশন ব্যবস্থা কি আরও কোন দেশে চালু আছে? আগামী দুই দশকের মধ্যেই বাংলাদেশে প্রবীণ জনসংখ্যা তুলনামুলকভাবে অনেক বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে, প্রবীণ নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তার বাইরে রাখলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা দুরূহ হয়ে পড়বে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০২০ সালে পৃথিবীতে ৬৫ বছরের বেশি প্রবীণ মানুষের সংখ্যা ছিল ৭২৭ মিলিয়ন বা ৭২.৭ কোটি। বর্তমান হারে বাড়লে, এ সংখ্যা ২০৫০ সাল নাগাদ দ্বিগুণ হবে; প্রতি ৬ জনে ১ জনের বয়স হবে ৬৫ বছর বা তার অধিক। এমন সংকটের কারণেই বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহ ইতোমধ্যেই ডিফাইন্ড বেনিফিট হতে ডিফাইন্ড কন্ট্রিবিউটরি পেনশন ব্যবস্থা চালু করেছে। এ ব্যবস্থায় একজন নাগরিক বা কর্মচারী নিজের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মাসিক ভিত্তিতে রাষ্ট্রের পেনশন ফান্ডে কন্ট্রিবিউট করে থাকে। তার জমাকৃত অর্থ হতে মুনাফার ভিত্তিতে অবসরের পর বা প্রবীণ বয়সে সরকারের নিকট হতে পেনশন গ্রহণ করে নিজের জীবনকে সুরক্ষিত করে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশই এর মধ্যে কন্ট্রিবিউটরি পেনশন ব্যবস্থা চালু করেছে।

ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং এ চাঁদা পরিশোধ করা যায়/ অনলাইনে একাউন্ট খোলা যায় এবং যে কোন সময় আপডেট তথ্য জানা যায়

সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং পেনশন ফান্ড এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রবাসে বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য প্রবাস স্কিম, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীদের জন্য প্রগতি স্কিম, যে সকল নাগরিক স্বকর্মে নিয়োজিত তাঁদের জন্য সুরক্ষা স্কিম এবং দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য সমতা স্কিম নামে ৪টি স্বেচ্ছামূলক স্কিম চালু করা হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মাধ্যমে দেশের জনগণের ভবিষ্যৎ আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা হবে সুনিশ্চিত ও সুসংহত যা উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে হবে অন্যতম চালিকাশক্তি।

Caption: upension.gov.bd

সর্বজনীন পেনশন স্কীম ২০২৪ । বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কি সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হচ্ছে?

  1. বাংলাদেশে ২৬২০টি নিবন্ধিত এনজিও আর্থ সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন লক্ষ্য সামনে রেখে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে।
  2. দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র, পশ্চাদপদ ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, এবং সমতাভিত্তিক টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এনজিও খাতের অবদান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
  3. বাংলাদেশে পরিচালিত এনজিওসমূহ কর্মসংস্থানেরও একটি বড় খাত। এনজিও ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সর্বজনীন পেনশনের বিভিন্ন স্কিমে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এনজিও বুরো ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি (MRA) সহ বিভিন্ন এনজিও সমূহের সাথে উদ্বুদ্ধকরণ সভার আয়োজন করে।
  4. এ সকল সভায় এনজিও ও এনজিওর স্টেকহোল্ডারগণ সর্বজনীন পেনশন স্কীমে অংশগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করে।
  5. এর ফলশ্রুতিতে “পপি” ও “এসকেএফ” নামক ২টি বৃহৎ এনজিও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহণ করেছে।
  6. ইতোমধ্যে ৯২ টি এনজিও রেজিষ্ট্রেশন করেছে যার মধ্যে ১০টি বৃহৎ এনজিও রয়েছে। আরও এনজিও নিবন্ধিত হওয়ার বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন আছে।

কোন কোন ব্যাংকে চাঁদা জমা দেওয়া যায়?

সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম বাস্তবায়নে আরও গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে গত ৩ জুলাই ২০২৪ তারিখ অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাথে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ ব্যাংকগুলো হলো- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক পিএলসি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক পিএলসি, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসি, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি, রূপালী ব্যাংক পিএলসি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ সচিব ড. মোঃ খায়েরুজ্জামান মজুমদার। ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও সিইও সহ অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান জনাব কবিরুল ইজদানী খান ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও সিইও সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংক সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিভিন্ন স্কিমে জনগনকে নিবন্ধন কাজে সহায়তাসহ নিবন্ধনকারীর সাবস্ক্রিপশন গ্রহণ করবে। যে কোন নিবন্ধনকারী এই ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখাসমূহের কাউন্টারে সাবস্ক্রিপশন জমা দিতে পারবেন। এছাড়াও গ্রাহকগণকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন করার জন্য ব্যাংকসমূহের শাখা ব্যবস্থাপকগণ সহায়তা প্রদান করবেন। এ সকল ব্যাংকের নির্ধারিত অ্যাপ ব্যাবহার করেও গ্রাহকগণ রেজিস্ট্রেশন ও অনলাইনে পেমেন্ট করতে পারবেন ।

প্রগতি স্কিম সমতা স্কিম প্রবাস স্কিম
সুরক্ষা স্কিম    
     
পেনশন স্কিম সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানুন এখানে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *