বাংলাদেশে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবার এই ধরনের কোনো রোগী যদি থাকে তবে তার চিকিৎসায় অনেক টাকা ব্যয় হয়ে যায়। আবার উক্ত ব্যক্তি যদি পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম হয়ে থাকে তবে পুরো পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু তাই নয়, তার সেবা করার জন্য আরো তিননচার জনকে তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম ছেড়ে দিতে হয়। পরিবারের আর্থিক ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।
চিকিৎসা ব্যয়ে কিছুটা সহযোগিতা করার উদ্দেশ্য বাংলাদেশ সরকার এগিয়ে এসেছে যা সকল পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে।
সূচীপত্র
আর্থিক সহায়তা কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ক. ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত গরীব রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান।
খ. আক্রান্ত রোগীর পরিবারের ব্যয়ভার বহনে সহায়তা করা।
গ. আবেদনকৃত রোগী চিকিৎসা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার বরাদ্দকৃত অর্থ পরিবারকে প্রদান করা হবে।
ঘ. সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করা।
ঙ. সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে ও প্রয়োজনে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সহায়তা করা।
আর্থিক সহায়তার পরিমাণ কত আসুন জেনে নেই।
ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত নির্বাচিত প্রত্যেক রোগীকে এককালীন ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা প্রদান করা হবে।
প্রার্থী নির্বাচনের মানদন্ড
ক. প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে
খ. সর্বোচ্চ দুস্থ ও উল্লেখিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে
গ. ভূমিহীন বা ০.৫০ একরের কম ভূমি আছে সে প্রাপ্য হবে
ঘ. শিশু, নিঃস্ব, উদ্বাস্তু, ভূমিহীনকে ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দিতে হবে
ঙ. বয়োজ্যেষ্ঠ, বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা, বিপত্নীক, নিঃসন্তান, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদেরকে ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দিতে হবে
আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির যোগ্যতা ও শর্তাবলি
ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীকে সংশ্লিষ্ট রোগের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ও টেস্ট রিপোর্টসহ নিম্নোক্ত কাগজপত্র সংযুক্ত করে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। আবেদন পত্রের ফরম সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট হতে সংগ্রহ করতে হবে। জেলা পর্যায়ে জেলা সিভিল সার্জন রোগীকে সনাক্ত করতে পারবেন।
ক. ক্যান্সার রোগের ক্ষেত্রে Histopathology/ Cytopathology/ Bone Marrow Report বা অন্যান্য টেস্ট রিপোর্ট থাকতে হবে
খ. কিডনি রোগের ক্ষেত্রে Acute Renal Failure অথবা Chronic Renal Failure এ আক্রান্ত ডায়ালাইসিস সেবা নিচ্ছে, কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন করেছে এমন রোগীদেরকে বিবেচনা করতে হবে। রক্তে ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনের মাত্রার রিপোর্ট থাকতে হবে।
গ. লিভার সিরোসিস রোগের ক্ষেত্রে লিভারের আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট এবং অন্যান্য টেস্ট রিপোর্ট থাকতে হবে।
ঘ. স্ট্রোকে প্যারালাইজড আক্রান্ত রোগীদের নিউরোলজিস্ট কর্তৃক প্রত্যায়িত হতে হবে এবং MRI/ CT scan report থাকলে ভাল হয়।
ঙ. জন্মগত হৃদরোগের ক্ষেত্রে Echo Cardiogram রিপোর্ট এবং অন্যান্য টেস্ট রিপোর্ট থাকতে হবে
চ. থ্যালাসেমিয়া রোগের ক্ষেত্রে রক্তের হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস বা অন্যান্য প্রযোজ্য পরীক্ষার রিপোর্ট থাকতে হবে।
ছ. জাতীয় পরিচয় পত্র/ জন্ম সনদ (গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত ফটোকপি) থাকতে হবে
জ. আবেদনকারী এক অর্থ বছরে একবারের বেশি আবেদন করতে পারবেন না
ঝ. ফরমের নির্ধারিত স্থানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের স্বাক্ষর থাকতে হব। তবে জেলার ক্ষেত্রে সিভিল সার্জন রোগী শনাক্ত করতে পারবেন
ঞ. আবেদনে ইতিপূর্বে সমাজসেবা অধিদপ্তর/ মন্ত্রণালয় হতে চিকিৎসা বাবদ অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে কিনা তা উল্লেখ করতে হবে
যে সকল কারণে আর্থিক সহায়তা বাতিল করা যাবে
ক. ভুল তথ্য দিলে কিংবা দাখিলকৃত কাগজপত্রের সঠিকতা প্রমাণিত না হলে
খ. সরকার কর্তৃক অন্য কোন আর্থিক সুবিধা এ উদ্দেশ্যে গ্রহণ করলে
গ. আর্থিক সহায়তার জন্য তালিকাভুক্তির পর উহা গ্রহণে ইচ্ছুক না হলে
এবার আসুন জানি সহায়তা অনুমোদন প্রক্রিয়াঃ
ক. ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী সরাসরি সংশ্লিষ্ট উপজেলা সমাজসেবা অফিসার অথবা শহর সমাজসেবা অফিসার বরাবর আবেদন করবেন
খ. উপজেলা সমাজসেবা অফিসার/ শহর সমাজসেবা অফিসার প্রাপ্ত আবেদন সর্বোচ্চ সাত দিনের মধ্যে প্রাথমিক যাছাই বাছাইপূর্বক মন্তব্য সহকারে উপপরিচাল, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে আবেদন প্রেরণ করবেন
গ. উপপরিচাল, জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সর্বোচ্চ সাত দিনের মধ্যে জেলা কমিটির নিকট চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পেশ করবেন। অনুমোদনের পর উপ-পরিচালক সংশ্লিষ্ট উপজেলা সমাজসেবা অফিসার/ শহর সমাজসেবা অফিসারের নিকট ক্রস চেক অথবা রোগীর ব্যাংক হিসেবে ইএফটি এর মাধ্যমে চিকিৎসার অর্থ প্রেরণের ব্যবস্থা করবে
ঘ. জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও উপপরিচাল, জেলা সমাজসেবা কার্যালয় এর যৌথ স্বাক্ষরে অনুমোদনের তিনদিনের মধ্যে চেক প্রদান করবে
ঙ. সংরক্ষিত ২৫% এর ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী উল্লেখিত ৬ টি রোগের চিকিৎসা খাতে ব্যয় নির্বাহ করবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করতে পারবে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় হতে প্রেরিত তালিকা এবং নির্দেশনা মোতাবেক পরিচালক সমাজসেবা অধিদপ্তরের স্বাক্ষর প্রদান করতে হবে।
অনলাইনে আবেদন করতে ক্লিক করুন
একটি জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর জন্য অনুদানের অনলাইন আবেদন করা যাচ্ছে না কেন?
অপেক্ষা করুন। সার্ভার খোলা হবে।