সরকারি কর্মচারী চাকরি আইন ভঙ্গ করলে সাধারণত সাময়িক বরখাস্ত বা সাসপেন্ড হয়ে থাকে- এক্ষেত্রে আদেশ জারির পর নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষা করতে হয়- ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে আবেদন করতে হয় বা কোর্টের স্বরণাপন্ন হওয়া যায় –সাময়িক বরখাস্তের আদেশ ২০২৪

সাসপেন্ড মানে কি? সাময়িক বরখাস্তের অর্থ হইতেছে, কোন কর্মচারীকে সাময়িকভাবে কার্য সম্পাদনে, দায়িত্ব পালনে, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রয়োগে বিরত রাখা এবং কতিপয় সুবিধা প্রাপ্তির অধিকার হইতে বঞ্চিত রাখা হয়। ফৌজদারী অভিযোগে অথবা দেনার দায়ে জেলে আটক সরকারী কর্মচারী গ্রেফতার হওয়ার তারিখ হইতে সাময়িক বরখাস্ত বলিয়া বিবেচিত হইবেন এবং বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত খোরপোষ ভাতা পাইবেন (বি এস আর পার্ট-১ এর ৭৩ নং বিধির নোট-(২)।

উপযুক্ত কারণ ছাড়া কি সাময়িক বরখাস্ত করা যায়? না। কোন কর্মচারী গ্রেফতারের পর বা আত্মসমর্পনের পর জামিনে মুক্তি লাভ করিলেও সাময়িক বরখাস্ত হিসাবে বিবেচিত হইবেন। তবে এইক্ষেত্রে জটিলতা এড়াইবার জন্য কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্তের ফরমাল আদেশ জারি করিবেন । (জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অফিস মেমোরেন্ডাম নং ED(Reg:-VI)S-123/78 / 115 (500), তারিখঃ ২১ নভেম্বর, ১৯৭৮)। সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর বিধি-৩ এর অনুচ্ছেদ (বি), (সি) বা (ডি) এর অধীনে অর্থাৎ অসদাচরণ বা ডিজারসন বা দুর্নীতির অভিযোগে বিভাগীয় মামলা গ্রহণের প্রস্তাব করার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ও যুক্তিযুক্ত মনে করিলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে বিধি-১১ এর বিধানমতে সাময়িক বরখাস্ত করিতে পারেন। এইক্ষেত্রে সাময়িক বরখাস্তকরণ কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাধীন।

কি কারণে সাময়িক বরখাস্তের করা যায়? স্মারক নং F.32/48-Ests(SE), তারিখঃ ২১ জুলাই, ১৯৪৯ অনুযায়ী নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ সাময়িক বরখাস্তের আদেশদানের ভিত্তি হিসাবে গণ্য হইবে- (ক) অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের বলিষ্ট প্রাথমিক তথ্য থাকিতে হইবে; (খ) অভিযোগ এইরূপ গুরুতর প্রকৃতির যে মামলা চলাকালীন তাহাকে দায়িত্ব পালন করিতে দেওয়া যুক্তিযুক্ত হইবে না, অথবা উক্ত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য দন্ড হইবে চাকরি হইতে বরখাস্ত; (গ) মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কর্ম হইতে বিরত রাখার বলিষ্ট কারণ বিদ্যমান; (ঘ) শৃঙ্খলার সামান্য বিচ্যুতি বা ছোটখাট অপরাধের ক্ষেত্রে সাময়িক বরখাস্ত করা উচিত নয়; (ঙ) কোন কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা যুক্তিযুক্ত হইবে না, যদি না- (১) সে ইচ্ছাকৃতভাবে বা এক গুয়েমীভাবে আদেশ পালনে অস্বীকৃতি জানায়; (২) তদন্তকালে কর্মরত থাকার ক্ষেত্রে তদন্তকাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি বা তদন্তকে ব্যাহত করে; (৩) কর্মচারী পুলিশ হেফাজতে থাকে; (৪) এমন প্রকৃতির অপরাধে অভিযুক্ত যাহা প্রমাণিত হওয়ার ক্ষেত্রে চাকরি হইতে বরখাস্ত দন্ড প্রয়োগযোগ্য ।

সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর বিধি ১১ এর উপবিধি (৩) এর বিধানমতে চাকরি হইতে বরখাস্ত, অপসারণ বা বাধ্যতামূলক অবসরের আদেশ কোন আদালত বা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক বাতিল হইলে কর্তৃপক্ষ মামলার অবস্থাদি বিবেচনাপূর্বক বিষয়টি পুনঃ তদন্ত করিতে পারিবেন । কর্তৃপক্ষ যদি পুনঃ তদন্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তাহা হইলে প্রথম যে তারিখ হইতে চাকরি হইতে বরখাস্ত বা অপসারণ বা বাধ্যতামূলক অবসরের দন্ড আরোপ করা হইয়াছিল, ঐ তারিখ হইতে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত আছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত উক্ত সাময়িক বরখাস্ত চলিতে থাকিবে ।

সাময়িক বরখাস্ত আদেশ কত দিনের মধ্যে উঠে যায়? / নির্ধারিত সময়সীমা উল্লেখ নেই তবে সাময়িক বরখাস্তের ক্ষেত্রে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিকরণের নির্দেশনা রয়েছে

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১১ জুন, ১৯৭৪ তারিখের স্মারক নং DI-38/74- 413 (40) অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্তের ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেমন অর্থকষ্টে পতিত হয়, ঠিক তেমনি সরকারকেও সময়, দক্ষতা এবং আর্থিক অপচয়ের সম্মুখীন হইতে হয়, তাই সাময়িক বরখাস্তের ক্ষেত্রে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন ।

সাময়িক বরখাস্ত আদেশ

Caption: info source

সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় প্রাপ্য সুবিধাদি ২০২৪ । খোরাকি ভাতা বলতে মূল বেতনের অর্ধেককে বোঝানো হয়

  • বেতনভাতা : স্মারক নং ED (Reg. IV ) – 202 / 83-39 তারিখঃ ১০ মে, ১৯৮৩ অনুযায়ী একজন সরকারী কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় নিম্নোক্ত সুবিধাদি প্রাপ্য- (১) বি এস আর-৭১ ও এফ আর-৫৩ (বি) বিধির অধীনে মূল বেতনের অর্ধ হারে খোরাকী ভাতা ।
  • (২) সাময়িক বরখাস্তের পূর্বের উত্তোলিত হারে পূর্ণ বাড়ী ভাড়া ভাতা ।
  • (৩) সাময়িক বরখাস্তের পূর্বের হারে বাড়ী ভাড়া পূর্বের হারে বাড়ী ভাড়া প্রদানের ভিত্তিতে সরকারী বাসভবনে বসবাস করিতে পারিবেন।
  • (৪) সাময়িক বরখাস্তের পূর্বে উত্তোলিত হারে পূর্ণ চিকিৎসা ভাতা ।
  • (৫) সাময়িক বরখাস্তের পূর্বের প্রাপ্য মহার্ঘ ভাতার অর্ধেক

সাময়িক বরখাস্ত কালে কি কি সুবিধা পাইবেন না?

সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারীগণের সাময়িক বরখাস্তের অব্যবহিত পূর্বে আহরিত মূল বেতনের যে অংশ খোরাকী ভাতা হিসাবে প্রাপ্য সে অংশের সমান উৎসব ভাতা পাইবেন। (অর্থ বিভাগের ৩০ জুলাই, ১৯৮৪ তারিখের স্মারক নং অম-অবি(বা)৪-এফ, বি-১২-৮৪(অংশ)/১০৭)। সাময়িক বরখাস্তকালকে পরবর্তী সময়ে কর্তব্য কর্মেরত হিসাবে গণ্য করিয়া বিধি মোতাবেক বকেয়া বেতন ও ভাতা প্রদান করা হইলে, সে ক্ষেত্রে উৎসব ভাতার বকেয়া পাইবেন। (অর্থ বিভাগের স্মারক নং এম,এফ/এফ- ডি(ইমপ্লি)-৪-এফ-বি/১২/৮৪/১১৫, তারিখঃ ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৫)। সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় যে সকল সুবিধা প্রাপ্য নয়- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ED (Reg. IV ) – 202 / 83-39 তারিখঃ ১০ মে, । ১৯৮৩ অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় নিম্নোক্ত সুবিধাদি পাইবেন না- (১) ভ্রমণভাতা, (২) যাতায়াত ভাতা; (৩) বাসায় টেলিফোন সুবিধা ; (৪) বাসায় অর্ডারলির সুবিধা; (৫) বাসায় পত্রিকার সুবিধা; (৬) আপ্যায়ন ভাতা বা আপ্যায়ন খরচ পাবেন না।

দ্বিতীয়বার সাময়িক বরখাস্ত হলে একবারে অবসরে? হ্যাঁ। সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর বিধি ১২ এর উপবিধি (১) অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্তের আদেশের অনুবৃত্তিক্রমে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হইলে, সাময়িক বরখাস্তকাল ক্ষতিপূরণ পেনশন বা আনুতোষিক বা ভবিষ্য * তহবিলের সুবিধাদি প্রদানের ক্ষেত্রে গণনাযোগ্য হইবে না। সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মচারীকে ছুটি প্রদান করা যাইবে না। বি এস আর, পার্ট-১ এর বিধি-৭৪। ছুটি ভোগরত কোন কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হইলে, সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দানের তারিখ হইতে ছুটি বাতিল হইবে। বি এস আর, পার্ট-১ এর বিধি-৭৪ এর ১নং নোট ।

আরও বিস্তারিত জানতে এখানে দেখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *